গর্ভপাতের আগে পুরুষের অনুমতি
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭রিপাবলিকান সাংসদ জাস্টিন হামফ্রে বিলটি উত্থাপন করেন৷ এই বিল অনুযায়ী, মহিলাদের গর্ভপাত করানোর আগে তাদের যৌন সঙ্গির লিখিত অনুমতি লাগবে৷ ওকলাহোমার হাউস পাবলিক হেল্থ কমিটি বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছে, যদিও হামফ্রে স্বীকার করেছেন যে, বিলটি সংবিধান বিরোধী হতে পারে৷ বিলটি এবার রাজ্য বিধানসভায় ভোটের জন্য যাবে এবং সেখানে বিলটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়৷
এইচবি ১৪৪১ বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভ্রুণের পিতার লিখিত অনুমতি ছাড়া এই রাজ্যে কোনো গর্ভপাত করানো হবে না৷'' মহিলাদের তাদের চিকিৎসককে লিখিতভাবে ভ্রুণের পিতার পরিচয় জানাতে হবে৷ এছাড়া সেই ব্যক্তি যদি তার পিতৃত্ব অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি একটি ‘পেটার্নিটি টেস্ট' বা পিতৃত্বের পরীক্ষা দাবি করতে পারেন৷
হামফ্রে তার বিলে এই শর্তও রেখেছেন যে, মহিলার যৌন সঙ্গী মারা গিয়ে থাকলে, তিনি গর্ভপাত করাতে পারেন, তবে তার জন্য নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে একটি এফিডেভিট সই করিয়ে নিতে হবে যে, তার যৌন সঙ্গি পরলোকগমন করেছেন৷ বিলে ‘ইনসেস্ট' অর্থাৎ নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে যৌনসংসর্গ বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে, কিংবা যদি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ফলে মহিলার জীবনাশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রেও গর্ভপাতের সুযোগ রাখা হয়েছে৷
‘আপনি আশ্রয়দাতা'
হামফ্রে তাঁর বিলে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ‘হোস্ট' বা গৃহকর্ত্রী কথাটা ব্যবহার করেছেন৷ মঙ্গলবারও তিনি বলেছেন যে, একজন মহিলার ‘গর্ভ' বর্ণনা করার জন্য নাকি এর চেয়ে উপযুক্ত কোনো শব্দ নেই৷ এটাই তাঁর কাছে উপযুক্ত শব্দ বলে মনে হয়েছে৷ তাঁর দাবি, তিনি এর মাধ্যমে মহিলাদের নীচু করতে চাননি৷
সোমবারই ‘দ্য ইন্টারসেপ্ট' নামের অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে হামফ্রে ব্যাখ্যা করেন যে, তাঁর বিলের উদ্দেশ্য হলো গর্ভপাতের প্রক্রিয়ায় পুরুষদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া৷ মহিলাদের সম্পর্কে হামফ্রে লিখেছেন, ‘‘আমি বুঝি যে, তাদের শরীরটা তাদের নিজের বলে মনে হয়৷ ওটা (ভ্রুণটি) একটা পৃথক (শরীর) - আমি (মহিলাদের) বলি, তোমরা একজন গৃহকর্ত্রী৷''
‘‘কিন্তু দায়িত্বহীন হবার পর এটা দাবি করলে চলবে না যে, আমি আরেকটি শরীর নিয়ে এটা (গর্ভপাত) করতে পারি, কেননা, তুমি (সংশ্লিষ্ট মহিলা) একজন গৃহকর্ত্রী, তুমি ওকে (ভ্রুণটিকে) আমন্ত্রণ করে এনেছো৷''
হামফ্রের এই সব মন্তব্য রাজনীতিক ও নারী আন্দোলনকারী, সকলের কাছ থেকেই সমালোচনা পেয়েছে৷ ‘উওমেনস মার্চ'-এর উদ্যোক্তারাও এই বিলের সমালোচনা করেছেন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালে একটি রায়ে বলে যে, গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ভ্রুণের পিতাকে খবর দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের পর রিপাবলিকান বিধায়করা গর্ভপাতের অধিকার সীমিত করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন৷ ট্রাম্প যে বিচারককে সুপ্রিম কোর্টের জন্য মনোনীত করেছেন, সেই নিল গরসাচ-ও তাঁর ‘প্রো-লাইফ' (গর্ভপাত বিরোধী) মনোভাবের জন্য পরিচিত৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৩ সাল থেকে গর্ভপাত আইনত বৈধ হলেও, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন ও বিতর্ক রয়েছে৷
আরএস/এসি/এসিবি (এপি,রয়টার্স)