গরান গাছেই জলবায়ুর প্রাণ
৩ এপ্রিল ২০১১মার্কিন কৃষি বিভাগের বন সেবা এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গবেষকরা ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৫টি ম্যানগ্রোভ নিরীক্ষা করে দেখেছেন: এই গরান গাছের জঙ্গলগুলি জলের ওপরে যে কোনো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলের মতোই কার্বন ডাই অক্সাইড জমা করতে পারে৷ কিন্তু জলের নীচে তারা পাঁচ গুণ বেশি কার্বন ধরে রাখতে সমর্থ!
এই ঠেসমূল বা শ্বাসমূল যুক্ত গাছগুলোর শিকড় বার হয়ে পড়ে জল নামলে, জোয়ার-ভাটার খেলায়৷ বিশ্বের একশো'টির বেশি দেশে এদের অস্তিত্ব৷ এবং মানুষ ও প্রকৃতি চিরকালই তার ফলে উপকৃত হয়েছে: যেমন ওদের ঐ শিকড়-বাকড়ের মধ্যেই ডিম পাড়ে নানা ধরণের মাছ এবং চিংড়ি৷ কিন্তু গত ৫০ বছর ধরে এই ম্যানগ্রোভগুলোকে কেটে এদের সামগ্রিক এলাকা প্রায় অর্ধেক করে ফেলা হয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে আবার ঐ চিংড়ির চাষ করার সদুদ্দেশ্যেই৷
কিন্তু ফলটা কী হয়েছে? সারা পৃথিবীতে ডিফরেস্টেশন বা অরণ্যনিধনের ফলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়েছে, তার দশ শতাংশ এসেছে এই গরানের জঙ্গলগুলি বিনষ্ট হওয়ার ফলে৷ অর্থাৎ তথাকথিত ফসিল ফুয়েল কমবাশচন বা কয়লা-কাঠ-তেল ইত্যাদি পোড়ানোর পরেই কার্বন নির্গমনের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হল এই ম্যানগ্রোভ নিধন৷ তার কারণ, গরানের জঙ্গল যে ধরণের কাদামাটিতে হয়ে থাকে, তা'তে হাজার হাজার বছর ধরে কার্বন জমা হয়ে আসছে৷ ম্যানগ্রোভ কাটলে সেই কার্বনটাও সুদে-আসলে বার হয়ে আসে৷
কাজেই এতোদিনে বিজ্ঞানীদের মুখে শোনা যাচ্ছে: গরানের জঙ্গল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটা বাঁধ বিশেষ৷ সে তো বটেই, আবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কি সুনামির বিরুদ্ধেও! কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গরানের জঙ্গলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই