গবেষণায় ব্যস্ত থাকতে চায় জার্মান ছাত্রী ক্রিস্টিনা
১৬ জানুয়ারি ২০১২কিছু জার্মান ছাত্র-ছাত্রী অবশ্য এগিয়ে আসছে৷ তারা বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে, পিএইচডি করছে৷ তারা অধ্যাপনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চায়৷
যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া এত সহজ নয়৷ অনেক চড়াই-উৎড়াই পার হতে হয়৷ এরপরেও জার্মানির বেশ কিছু তরুণ-তরুণী আগ্রহ প্রকাশ করেছে শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে৷ ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ তাদেরই একজন৷ ৩০ বছরের এই ছাত্রী সারাজীবন গবেষণা করেই কাটিয়ে দিতে চান৷ তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ পিএইচডিও শেষ করেছেন৷ থিসিস পেপার জমা দিয়েছেন৷ এখন অপেক্ষা করছেন মৌখিক পরীক্ষার জন্য৷ ক্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা হতে চান৷
ক্রিস্টিনা কথা বলছে সেক্রেটারির সঙ্গে৷ মৌখিক পরীক্ষা কবে তা জানার জন্য৷ ক্রিস্টিনা প্রশ্ন করছেন, বৃহস্পতিবার মৌখিক পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছিল৷ তা কি ঠিক আছে? সেক্রেটারির উত্তর: মৌখিক পরীক্ষা হবে৷ তবে তা আবারো পিছিয়ে গেছে৷ তিনজনের মধ্যে দুজনই উপস্থিত থাকতে পারবে না৷ আমি চেষ্টা করছি অন্য কাউকে আনা যায় কিনা৷
ক্রিস্টিনা জানতে চাইলেন, সুপারবাইজারের লিস্ট কি তৈরি হয়ে গেছে?
ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চান ক্রিস্টিনা৷ সেক্রেটারি চেষ্টা করছেন তার মৌখিক পরীক্ষার জন্য দিন তারিখ ঠিক করতে৷ ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ মাস্টার্স শেষ করার পরপরই পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়ে যান৷ তিনি গবেষণার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান৷ এটাই হবে তার ক্যারিয়ার, এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন৷ নভেম্বর মাসের শেষে তিনি তার থিসিস জমা দিয়েছেন৷ এ বছরের শুরুতে ফলাফল হাতে পাওয়ার কথা৷ ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ বললেন,‘‘ সবচেয়ে বড় কথা হল যে কেউ তার পছন্দমত বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারবে৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে এরকম অনেকেই শেষ পর্যন্ত গণসংযোগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে৷ অনেকেই চায় দারুণ একটি চাকরি করবো৷ কিন্তু বিষয়ের কথা বললে দেখা যাবে সেসব কাজে তেমন গভীরতা নেই৷ ঠিক যেমনটি থাকতে পারে গবেষণার ক্ষেত্রে৷''
থিসিসের বিষয় পছন্দ করতে গিয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী সন্দেহে দুলতে থাকে৷ তবে ক্রিস্টিনার জন্য তা ছিল বেশ সহজ৷ যেমন আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি তার আগ্রহ রয়েছে৷ তিনি কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছেন, জেনেছেন অনেক কিছু৷ দেশগুলো ঘুরেও দেখেছেন তখন৷ গবেষণার কাজ টুক-টাক করেছেন সেখানে৷ তবে এত গবেষণার পরও চাকরি পাওয়ার পরিধি কম৷ ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ জানান,‘‘এখানে কাজ করতে হয় প্রাইভেট ডিটেকটিভের মত৷ প্রথমে পড়তে করতে হয় বই এবং বিভিন্ন নথিপত্র৷ এসব পড়তে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখতে ভালই লাগে৷ তারপর এসব সত্যিকার অর্থেই কাজে লাগে কিনা তা দেখা হয় কর্মক্ষেত্রে৷ তখন সবকিছু আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে৷''
তবে জার্মানিতে গবেষণার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বোঝানো হয় বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে৷ বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত পোষণ করে৷ তখন অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কাজ করতে হয়৷ ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখের মতে এটা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সেমিনারে সবসময়ই শেখানো হয় কীভাবে গবেষণার কাজ চালাতে হবে, কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে৷ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেই বা কীভাবে কাজ করতে হবে তাও বোঝানো হয়৷
ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ বললেন,‘‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমি যা শিখছি, যা নিয়ে গবেষণা করছি তা আমি পরবর্তী সময়ে কীভাবে তা শিক্ষণীয় করে তুলতে পারি – তা তুলে ধরা৷ আমি শুধু বই থেকে পড়াতে চাই না, শুধু বই পড়লেই হবে সেকথাও ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে চাই না৷ আমি যা বলছি, যা করছি তার সঙ্গে সবকিছুর একটি সংযোগ থাকা চাই৷ ছাত্র-ছাত্রীরাও যেন তা বুঝতে পারে৷''
ক্রিস্টিনা ভাইসেনবাখ মিউনিখ এবং ডুইসবুর্গের মধ্যে গত দু'বছর ধরে আসা যাওয়া করছেন৷ তিনি গবেষক হিসেবে কাজ করতে চান – বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দু'বছর ধরে তা বোঝানোর চেষ্টা করছেন৷ তবে তাকে পার্ট-টাইম কাজ দেয়া হয়েছে এবং যে কোন দিন এই চাকরির মেয়াদ শেষ হতে পারে৷ এই কাজের জন্য তিনি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন খুবই কম৷ কিন্তু তারপরেও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তেই হবে– একেই বলে প্যাশন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক