1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণপিটুনিতে হত্যার বিচার হয় না

১৩ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশে গত তিন বছরে গণপিটুনির শিকার হয়ে ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন৷ কিন্তু এ নিয়ে দায়ের করা কোনো মামলারই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই৷ নতুন করে আবার গণপিটুনিতে হত্যার প্রবণতা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/3W8R9
Zwei Frauen ohrfeigen sich
ছবি: picture-alliance/E.Topcu

সোমবার ভোররাতে যশোরের অভয়নগরে ‘গরু চোর' সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ পুলিশ বলছে, তারা পাশের সদর উপজেলার গাদাইগাছি গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তিনটি গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতা টের পেয়ে তাদের ধরার জন্য মসজিদের মাইকে সহায়তা চায়৷ পালিয়ে যাওয়ার সময় পাশের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগে জনতার হাতে ধরা পড়ে৷ এরপর ওই এলকার স্কুল মাঠে তাদেরকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়৷

এদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ‘গরু চুরির' অপবাদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম নামে এক কিশোরকে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে শতশত মানুষের সামনে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে শনিবার (১১ জানুয়ারি)৷ পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা বলে অভিযোগ রয়েছে৷

রোববার (১২ জানুয়ারি) বরগুনার পাথরঘাটা এলাকায় রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক গণপিটুনির শিকার হয়েছেন৷ তবে স্থানীয় এমপির লোকজন এই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ এমপি নিজেও মারধোর করেন বলে ভুক্তভোগীর পরিবার দাবি করেছে৷ ওই যুবকের পৈত্রিক সম্পত্তিকে স্লুইস গেট নির্মাণে বাধা দেয়ায় তাকে পিটুনি দেয়া হয়৷ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এই তিনটি ঘটনার কোনোটিতেই পুলিশ কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি৷

রাজীব নন্দী

গত বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷ ২০ জুলাই ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানকে ভর্তি করানোর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন তসলিমা বেগম রেনু৷ ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়৷ এই ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় উঠলে পুলিশ সক্রিয় হয়৷ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়৷ কিন্তু এখনো অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি৷ মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা বিভাগ৷ গোয়েন্দা বিভাগের ওই জোনের উপ পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘‘ফুটেজ ও ছবি দেখে আমরা মূল অভিযুক্তসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি৷ কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি৷ অনেক লোকের উপস্থিতিতে ঘটনা তাই এর তদন্ত সময়সাপেক্ষ৷''

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে ২০১৮ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন৷ সবশেষ ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৬৫ জন হয়েছে৷ জুলাই পর্যন্ত প্রথম সাত মাসেই নিহত হয়েছেন ৫৩ জন৷ গত বছর গণপিটুনিতে হত্যার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে৷ ২৫ জন মারা গেছেন সেখানে৷ ঢাকায় নিহত হয়েছেন ২২ জন৷

বাংলাদেশ ও ভারতে গণপিটুনির ধরন ও প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে চাঞ্চল্যকর ১০টি গণপিটুনির কোনো বিচার হয়নি এবং সঠিক তদন্তও হয়নি৷ সাভারে ছয় ছাত্রকে হত্যা, শাবিপ্রবির ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, চট্টগ্রামে চারটি বড় ধরনের গণপিটুনির ঘটনায় কোনো বিচার হয়নি৷''

এরমধ্যে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্রকে গণপিটুনিতে হত্যার পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল৷ তারা রাতে ঘুরতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন৷ ওই ঘটনায় এখনো বিচার পায়নি নিহতদের পরিবার৷

মশিউর রহমান

রাজীব নন্দী বলেন,‘‘আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা চালু ছাড়া গণপিটুনি বন্ধ হবে না৷ আর রাজনৈতিক সহিংসতা দূর না হলেও গণপিটুনি বন্ধ হবে না৷ তবে আইনের শাসনের অনুপস্থিতিই গণপিটুনির প্রধান কারণ নয়৷ যেহেতু কিছু কিছু গণপিটুনির ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গণপিটুনির পর জনতা নিজ উদ্যোগে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে ভিকটিমকে৷ এটা প্রমাণ করে এখানো আইনের প্রতি মানুষ পুরোপুরি আস্থা হারায়নি৷''

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি হবে, যখন উন্মত্ত জনতার আদালত সর্বস্তরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে৷ যা এক কথায় অরাজক অবস্থা৷''

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে মশিউর রহমান বলেন, ‘‘এটা অনেক মানুষের ঘটনা৷ প্রধান সমস্যা হলো সাক্ষী পাওয়া কঠিন৷ গণপিটুনির সময় অনেক লোক থাকলেও যে কারণে তারা উদ্ধার করতে যান না, একই কারণে তারা সাক্ষ্যও দেন না৷ আর যারা কথা বলেন তারাও তো সব সময় চেনেন না যে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে৷ এটা এমন একটা বিষয় যা সবার কাজ আবার কারুরই কাজ নয়৷ আর অনেকেই আছে হুজুগে এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন৷ ফলে তাদের চিহ্নিত করাও কঠিন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য