গণতন্ত্র হত্যা দিবস বনাম বিএনপির মনের জ্বালা দিবস
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সোমবার দুপুরে পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে৷ নারীসহ তাদের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী হামলায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ আর বিএনপিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতিই দেয়নি পুলিশ৷ পুলিশ বিএনপিকে রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ ঠিকই তাদের ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের' সমাবেশ করেছে৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘আমরা এই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস মনে করি৷ তাই গণতন্ত্র হত্যা দিবসে আমাদের আজ (সোমবার) কালো দিবসের কর্মসূচি ছিল৷ প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল৷ কিন্তু সরকার সেই কর্মসূচি পালন করতে না দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, এটা আসলেই কালো দিবস৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি৷ নির্বাচন কমিশনও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়নি৷ ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়ে গেছে৷ নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিরোধী দল যদি ইভিএম-এ নির্বাচনে রাজি হতো তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো না৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে এখন মানুষকে কথাও বলতে দিচ্ছে না৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ সভা সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ তাই গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই অধিকার ফিরে আসবে৷''
দুপুর দুইটায় বিএনপির সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল৷ পুলিশ সকাল থেকেই বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রাখে৷ তাই নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টন এলাকায় যেতেই পারেননি৷
দুপুরে সিপিবি'র নেতৃত্বে ৮টি বাম সংঠনের মোর্চা বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালায়ে প্রতিবাদী শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়ার পথে হাইকোর্ট কদম ফোয়ারার কাছে প্রথমে পুলিশ ব্যারিকেডের মুখে পড়ে৷ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় তারা৷ তবে মৎস ভবনের সামনে আবার পুলিশি বাধার মুখে পরে৷ তখন পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে৷ এসময় পুলিশের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়৷
বাম গণতাান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন জানান, নারীসহ তাদের ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন৷ নারী পুলিশ ছিল না৷ তাদের নারী নেতা-কর্মীদের স্পর্শকাতর জায়গায়ও আঘাত করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে, তার তো আমাদের দাবি মানবে না৷ আমরা ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকেই নতুন নির্বাচন দাবি করে আসছি৷ যারা সরকারকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছে তারাই এখন হামলা করে সরকারকে টিকিয়ে রাখতে চাইছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন মানুষের ভোট দেয়ার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিবাদের অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে৷''
এদিকে বিকেলে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবসের' সমাবেশ করেছে৷ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন হয়েছে৷ এটা কালো দিবস হবে কেন? বিএনপি মহসাচিব ৩০ ডিসেম্বর সারাদিন বলেছেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, ভোট ভালো হয়েছে৷ যখন বিএনপি'র লজ্জাজনক পরাজয় হলো, তখন উনি বলা শুরু করলেন ভোট কারচুপি হয়েছে৷ বিএনপি এখন যা বলছে, তা মনের জ্বালা থেকে বলছে৷ এটাকে কালো দিবস না বলে তারা যদি ‘মনের জ্বালা দিবস' বলতো তাহলে বেশি মানানসই হতো৷
এদিকে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘অফিস খোলার দিন হওয়ায় জনদুর্ভোগ এড়াতেই বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি৷'' আর বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিএমপির কোনো কর্মকর্তা৷
তবে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়৷ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দিলেই তো তারা জ্বালাওপোড়াও করে৷ গাড়ি ভাঙচুর করে৷ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে৷ আওয়ামী লীগ তো আর গাড়ি ভাঙচুর করে না৷''