গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কোটিপতি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘মামা বাহিনী'র প্রধান কমান্ডার ছিলেন সৈয়দ শহীদুল হক৷ সুইডেন প্রবাসী এই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয়৷ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের উত্তাল সময়ে খুব দেখা যেতো তাঁকে৷ বাংলাদেশের অনলাইন পোর্টাল পরিবর্তন ডটকমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রজন্ম চত্বর থেকে সরে আসার কারণও জানিয়েছেন তিনি৷ ৬ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও সাক্ষাৎকারটি নিয়ে ‘গণজাগরণ মঞ্চ থেকে অনেকে কোটিপতি হয়েছেন' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও ছেপেছে পরিবর্তন ডটকম৷ সেখানে সৈয়দ শহীদুল হক বলেছেন, ‘‘এই শাহবাগের জন্ম দিলাম আমি৷ একসময় দেখলাম, তথাকথিত এই জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফরা বাধ্য হলো আমাকে স্তব্ধ করতে৷ আমাকে বললো – এই মঞ্চ থেকে চলে যান৷''
কেন তাঁরা বাধ্য হলেন সে সম্পর্কে কিছু না বলে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘(তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে) আদালতে সাক্ষী হয় নাই৷ সুযোগ ছিল৷ আমরা জীবন বাজি রেখে সুইডেন থেকে এসে সাক্ষী দিলাম৷ কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই৷ আপনারা তো ‘সোনার চান পিতলা ঘুঘু', রাজধানীর বুকে থাকেন৷ শাহবাগকে সামনে রেখে অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে৷ অনেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন৷ আমি কিছু পাওয়ার জন্য আসিনি, কিছু দেওয়ার জন্য এসেছি৷ বঙ্গবন্ধু যেমন দলের জন্য তার জীবন-যৌবন শেষ করে গেছেন, জীবনে কখনো ভোগ করেন নাই – ত্যাগ করে গেছেন৷ আমি তার রাজনৈতিক শিষ্য৷ বঙ্গবন্ধু সারা বাংলার নয়নের মনি৷ আমি সেই পথের পথিক৷''
সাক্ষাৎকারে সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি আদায়ে অটল থাকার অঙ্গীকারও করেছেন সৈয়দ শহীদুল হক, বলেছেন, ‘‘আমি রাজাকার, আলবদর, আল শামস এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা মসনদে আরোহন করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে যারা সপরিবারে হত্যা করেছিল, তার হত্যার বিচার নেবোই নেবো৷ এই কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন ফাঁসিতে পরিণত হয়েছে৷ কখন ফাঁসিতে ঝুলবে আমি সেই দিনটির প্রতীক্ষায় আছি৷ আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, আমি অত্যাচারীদের পছন্দ করি না৷ একাত্তরের দালালরা জায়নামাজ বিছিয়ে বলেছিল, পাকিস্তানকে রক্ষা করো৷ আল্লাহ তাদের হেফাজত করে নাই৷ পৃথিবীতে আল্লাহ ইনসাফের ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, (তা) এই রগকাটা-গলাকাটা জামায়াতের জন্য না৷''
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সৈয়দ শহীদুল হক ‘মামা'-র সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি লিখেছেন , ‘‘দ্য অ্যাক্টিভিস্ট ইজ নট দ্য ম্যান হু সেজ দ্য রিভার ইজ ডার্টি৷ দ্য অ্যাক্টিভিস্ট ইজ দ্য ম্যান হু ক্লিনস আপ দ্য রিভার – রস পেরট৷'' যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ রস হেনরি পেরটের উক্তি এটি৷ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে শুধু কাজে ভুল বা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো মানুষ কখনোই ভালো কর্মী নয়, ভালো কর্মী তিনি, ভুল বা দোষ দূর করার কাজে যিনি সদাতৎপর৷ এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ড. ইমরান এইচ সরকারের পোস্টটি ৬৮৯ জন ‘লাইক' করেছেন৷ মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ মন্তব্যকারীদের অনেকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে ইমরানের প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন৷ বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ৷ বিরোধিতাকারীদের বেশির ভাগই লিখেছেন ছদ্মনামে৷ ইমরান এবং তাঁর সমর্থনকারীদের ‘নাস্তিক' আখ্যা দিয়ে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়েছেন তাঁরা৷ প্রতিপক্ষের পিতা-মাতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কেও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে সেখানে৷
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন