গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন কলকাতার ঘাট, রবীন্দ্র-সমাধি
হাওড়ার দিকে পলি জমছে। গঙ্গার স্রোত ধাক্কা মারছে কলকাতার ঘাটে। ঘাট ভাঙছে। বিপন্ন নিমতলায় রবীন্দ্র-সমাধি।
কলকাতায় গঙ্গার ভাঙন
এবার গঙ্গার ভাঙনের মুখে কলকাতা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ''কলকাতার কয়েক জায়গায় গঙ্গা ভাঙন হচ্ছে। নিমতলা ঘাটে চাঁই ভেঙে পড়েছে। মায়ের ঘাটের দিকে মাটি সরে যাচ্ছে। ঘাটগুলো ঝুলছে। এর জন্য পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে আজ বৈঠক ছিল। ওরা রাজি হয়েছে। দ্রুত এই ঘাটগুলোর কাজ শুরু হবে।''
নিমতলা ঘাটে রবীন্দ্র-সমাধি
নিমতলা ঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তারপর সেখানে রবীন্দ্র-সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়। গঙ্গার ভাঙনের ফলে সেই রবীন্দ্র-সমাধি বিপন্ন।
সংকটে রবীন্দ্র-সমাধি
নিমতলা ঘাটে রবীন্দ্র-সমাধির এই ছবি দেখলেই বোঝা যাবে, সংকট কতটা গভীর। তা গঙ্গায় তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে মেয়র পুরসভার কমিশনারকে নিয়ে নিমতলা ঘাটে যান। পরিস্থিতি দেখে তিনি রীতিমতো চিন্তিত।
কলকাতার ঘাটের অবস্থা
কলকাতার বিভিন্ন ঘাটে মাটি সরছে। গঙ্গার ঢেউ সমানে ধাক্কা মারছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে মায়ের ঘাট। কলকাতার অনেকগুলি ঘাটের এই অবস্থা হয়েছে। মেয়র জানিয়েছেন, মায়ের ঘাট ও তার আশপাশের অনেকগুলি ঘাটের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে ঘাটগুলি ঝুলছে।
সমস্যা তীব্র হচ্ছে
কলকাতায় গঙ্গার ভাঙনের সমস্যা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভাঙনের কবলে পড়ে কিছু জমি গঙ্গায় তলিয়ে গেছে। মেয়র জানিয়েছেন, ঘাটের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। পাথুরিয়াঘাটার এই ছবিও সংকটের স্বরূপটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
কেন এই ভাঙন?
গঙ্গার একদিকে কলকাতা, অন্যদিকে হাওড়া। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, হাওডার দিকে গঙ্গায় বিপুল পরিমাণ পলি জমছে। তাই গঙ্গা গতিপথ বদলের চেষ্টা করছে। কলকাতার দিকে স্রোত ধাক্কা মারছে। ফলে কলকাতার ঘাট ভাঙছে।
ড্রেজিং হয় না
কলকাতার খিদিরপুর থেকে সাগর পর্যন্ত জাহাজ চলাচল করে। তাই এখানে ড্রেজিং হয়। কিন্তু বাকি এলাকায় হয় না। তাই হাওড়ায় যে পলি জমছে, তা সরানোর কাজ হয় না। প্রতিবছর বর্যার তিন মাস পলি পড়ে গঙ্গায়। সেই পলি জমতে থাকে। নদীর নাব্যতা ও জলধারণের ক্ষমতা কমে। তখন নদীর স্রোতের গতিপথ বদল হয়। সেই সমস্যায় পড়েছে কলকাতা।
সরকারি জটিলতা
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ''কলকাতায় গঙ্গা হলো পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে। এটা দেখার জন্য ওদের আলাদা বিভাগ আছে। পোর্ট ট্রাস্ট আবার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। আমরা ওদের সঙ্গে বসেছিলাম। ওরা ভাঙন রুখতে ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়েছে। সব ঘাট বাঁধানো হবে।''
পুরসভা কী করছে?
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, পুরসভা নিজের সামর্থ্য অনুসারে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। গঙ্গার ধারে নারকেল গাছ ও ম্যানগ্রোভ লাগানো হচ্ছে। এই গাছ মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। তবে তিনি জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা দিয়ে ভাঙন রোধ করা যাবে না। পোর্ট ট্রাস্টকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নদী বিশেষজ্ঞের বক্তব্য
নদী ও জলসংরক্ষণবিদ তাপস দাস ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''গঙ্গার ভাঙন রোধ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার। ড্রেজিং তো করতেই হবে। সেইসঙ্গে জলের প্রবাহ বজায় রাখতে হবে। আর সমীক্ষা করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদীর ধার বাঁধানো দরকার।''