খেলাটাই শেষ কথা নয়: নাজমুল আবেদিন ফাহিম
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ডয়চে ভেলে: ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব যদিও তার ফেসবুক পোস্টের জন্য বোর্ডের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন৷ ক্রিকেটারদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
নাজমুল আবেদিন ফাহিম: পাবলিক ফিগার হিসেবে যে কোনো পেশারই হোক না কেন তাদের একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে৷ তাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের আচার, ব্যবহার, কথাবার্তা সবকিছু যেন একটা শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে।
তারা যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তখন খেলার বাইরেও এইসব ব্যাপারে আলাদা করে যত্ন নেয়া হয় কিনা?
এসব ব্যাপার যে খুব বেশি কিছু করা হয় তা নয়৷ আমাদের এখানে যারা ক্রিকেট খেলতে আসে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে তাদের অনেক কিছুই তখন প্রকাশ পায় না৷ তখন আধুনিক জীবন-যাপন, চিন্তা এগুলোর অনেক কিছুর সাথে তাদের যোগাযোগ থাকে না৷ আস্তে আস্তে বিষয়গুলো আসে৷ এটা ওদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ৷ অনেক কম বয়সে একটা ছেলের যখন নাম হবে , অর্থ হবে এগুলোর একটা প্রভাব তো তাদের জীবনে থাকবেই৷ ফলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ওরা এগুলো কীভাবে সামলে উঠবে৷ জীবনকে কীভাবে সামলে নিবে৷ এগুলো ওদের কর্মসূচীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি৷ কারণ তাদের পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে এগুলোর একটা ভূমিকা থাকে৷ এগুলো সামলাতে না পারলে ভালো পারফর্ম করা কঠিন বা দীর্ঘ সময় পারফর্ম করা সম্ভব নয়৷ তাই তাদের আচার ব্যবহারের সঙ্গে তাদের চিন্তা ভাবনা কেমন হবে সেটাও গাইড করা দরকার৷
এই বিষয়গুলো তাদের প্রশিক্ষণে কীভাবে যুক্ত করা যায়৷ বিসিবি কীভাবে করতে পারে?
একটা তো আছে শিক্ষার মাধ্যমেই করা যায়৷ অনেক ধরনের সামাজিক প্রোগ্রামের মাধ্যমেও করা যায়৷ আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলি৷ প্র্যাকটিক্যালি ওদের অনেক জায়গায় যুক্ত করা যায়৷ একটি স্কুলে যেতে পারে৷ একটি হাসপাতালে যেতে পারে৷ এসব জায়গায় গিয়ে তারা সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশবে৷ অবদান রাখার চেষ্টা করবে৷ এটা তাদের উপলব্ধি বাড়াবে৷ তারা বুঝতে পারবে যে তারা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে৷ তাদের একটি কথার সমাজে প্রভাব অনেক৷ এতে তাদের দায়িত্ববোধ বাড়বে৷ তারা বুঝবে খেলার বাইরে তাদের অনেক কিছু করার আছে।
অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড কি খেলার বাইরে এই আচার ব্যবহারের বিষয়গুলো শেখায়? আপনার অভিজ্ঞতা কী?
এটা যে ক্রিকেট বোর্ডকেই করতে হবে সেরকম নয়। ওইসব দেশে ওরা যে পরিবেশে থাকে, যে স্কুলে পড়ে সেখানে সব পরিবেশেই এই ব্যাপারগুলো থাকে৷ আমাদের এখানে যেহেতু থাকে না তাই আমাদের সচেতনভাবে প্রোগ্রাম করা উচিত৷ যাতে এটার মধ্য দিয়ে ওরা বুঝতে পারে খেলার বাইরেও ওদের গুরুত্ব কতটুকু৷ ওরা খেলার বাইরেও সমাজে ভূমিকা রাখতে পারে৷ অষ্ট্রেলিয়ান একটি ছেলে যদি রাশিয়ান টিমে খেলে তার জীবন যাত্রার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না৷ সে কিন্তু এই প্রথম একটা ফাইভ স্টার হোটেলে ঢুকবে বা থাকবে তা কিন্তু নয়৷ কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হবে৷ ফলে বাইরের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য অনেক বেশি৷ এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে৷
পাঠ্যপুস্তকে অনেক উপাদান ঢুকেছে যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ বিকেএসপির পাঠ্যপুস্তকেও তাই৷ আবার সমাজে নানা নেতিবাচব উপাদান যুক্ত হচ্ছে৷ এর প্রভাবও কি তাদের উপর পড়ছে?
না আমার মনে হয় এবার যেটা ঘটেছে সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ তা না হলে এখানে তো জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় আছে৷ সবার ক্ষেত্রে তো ঘটছে না৷ ঘটছে এই কারণে যে ওদের আমরা সেই এক্সপোজারটা দিচ্ছি না৷ সচেতন করছি না৷ ওদের আমরা অনেক কিছু দেখাতে পারিনি৷ ফলে হঠাৎ করে একটা কিছু দেখলো, তার কাছে মনে হলো ওইটাই সেরা৷ ফলে ওইখানে আটকে যায়৷ তাই আমাদের তাদেরকে ওইভাবে সচেতন করতে হবে৷ যাতে তারা সঠিকটা বুঝতে পারে৷
আরো কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের আচরণ তো সমালোচিত হয়েছে৷ তারা অগ্রহণযোগ্য আচরণ করেছেন৷ এগুলো কি তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? না তাদেরও সচেনত করতে হবে?
সব ক্ষেত্রেই, সব ব্যাপরে সচেতন করতে হবে৷ আমরা বলি ওরা স্কুল, কলেজে পড়েছে৷ সত্যিকারভাবে, সেই অর্থে শিক্ষিত তো তারা না৷ স্যোশাল নর্মস এর কথা বলি, ভ্যালুজ ও এথিকস-এর কথা বলি, এই শিক্ষাগুলো তো ওদেরকে আমরা দিতে পারি নাই৷ আমরা ওদের কাছ থেকে খেলাটাই আদায় করে নিয়েছি৷ এর বাইরে অন্য কিছু সেভাবে চিন্তা করি নাই৷ আসলে আরো বড় করে চিন্তা করা দরকার৷ তাদের বেড়ে ওঠা, মানবিক বিষয়, এগুলো দেখা দরকার৷ কারণ খেলাটাই তো শেষ কথা নয়৷ তাদেরকে ভালো নাগরিক হতে হবে৷ তাদের যে খেলার শক্তি সেটা মাঠের বাইরে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও ভাবা দরকার৷
তাদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
আমাদের দেশে এইরকম মানুষের সংখ্যা তো খুব কম যারা রোল মডেল৷ যাদেরকে সবাই দেখে, অনুসরণ করে৷ তাই তাদের দায়িত্বটাও অনেক বড়৷ তাই তাদের খেলার বাইরেও রোল মডেলের ভূমিকা রাখার মতো প্রস্তুতি থাকা উচিত৷ তাদের সেভাবেই তৈরি করতে হবে৷