খেলনা গাড়ি যখন ছবির মডেল
৩ ডিসেম্বর ২০১৪গাড়ির ছোট মডেল, অথচ দেখতে কী বড় লাগে! তা সে পথেই হোক, শহরের মাঝে, বনে-জঙ্গলে অথবা নদীর ধারে – একেবারে আসলের মতোই সেগুলিকে তুলে ধরা হচ্ছে৷ এমন সব ছবির পেছনে রয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ফটোগ্রাফার কিম লয়েনব্যার্গার৷ গত তিন বছর ধরে তিনি গাড়ির মডেল নিয়ে কাজ করছেন৷ ১৯ বছর বয়স থেকে নিজের প্রথম ক্যামেরা নিয়ে তিনি মোটিফের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলেন৷ কিম বলেন, ‘‘দিনটা ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল একটি রবিবার৷ বাড়িতে বোর হচ্ছিলাম৷ যেমনটা বলেছি, আমার শহরে মানুষের চেয়ে গরুর সংখ্যাই ছিল বেশি৷ তখন ঘরের সব জিনিস ও ছ'মাস আগে বাবা-মার দেওয়া ছোট ভ্যান এবং ছোট্ট প্যাডিংটন ভালুক নিয়ে বাগানে সাজানোর চেষ্টা করলাম৷ এভাবেই শুরু হয়েছিল৷''
কিম সেই প্রথম ছবিগুলি ইন্টারনেটে পোস্ট করেন৷ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাঁকে বেশ অবাক করেছিলো৷ প্রশংসা পেয়ে নতুন ফটো সিরিজ শুরু করেন তিনি যার নাম ‘ট্রাভেলিং কার অ্যাডভেঞ্চার্স'৷ মডেলগুলি তাঁর ইউরোপ-যাত্রায় সঙ্গেই থেকেছে, যেমন ইটালিতে, নিজের দেশ সুইজারল্যান্ডে অথবা গ্রিসে৷ কিম বলেন, ‘‘যেখানেই গেছি, সেখানে আরও এমন গাড়ি দেখেছি৷ ফলে আরও কিনতে শুরু করি৷ দ্বিতীয়টি ছিল ইটালির এক ছোট ভেসপা স্কুটার, তারপর স্পেনে ছোট বিটল গাড়ি৷ যেখানেই গেছি নতুন গাড়ি কিনেছি৷''
কিম ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে ছবিগুলি প্রকাশ করেন৷ সেখানে তাঁর ফ্যান-দের সংখ্যা ৩৭,০০০ পেরিয়ে গেছে৷ সবচেয়ে সুন্দর ছবিগুলি বিক্রি করে তিনি নিজের আয়ও বাড়িয়ে নেন৷
কিম লন্ডনে শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ ভবিষ্যতে ফটোগ্রাফি-কে পেশা হিসেবেই নিতে চান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যি কমার্শিয়াল ইন্ডাস্ট্রি এডিটোরিয়ালে কাজ করতে চাই৷ কোনো সংগীত ব্যান্ডের কভার, বইয়ের মলাট এবং ম্যাগাজিনের জন্য কাজ করতে চাই৷ আমার ছবি দিয়ে গল্প বলতে চাই৷''
সেটা হওয়া পর্যন্ত কিম নিজের ফটো সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত৷ ফ্লি মার্কেটেই গাড়ির মডেল কিনতে ভালোবাসেন তিনি৷ যেমন লন্ডনের বিখ্যাত কেনাকেটার জায়গা পর্টোবেলো রোডে৷ তবে সেগুলি হতে হবে পুরানো ক্লাসিক গাড়ির মডেল৷ কোন বৈশিষ্ট্য জরুরি, কিম তা ভালোই জানেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গাড়ির সামনেটা বেশ ফটোজিনিক হতে হবে৷ আমি সব কোণ থেকেই দেখি, কারণ আমি পেছন থেকেও ছবি তুলতে চাই৷ বিশেষ কিছু অ্যাঙ্গেল থেকে ভালো দেখালেও চলবে৷''
এখন তাঁর কাছে ৫০টিরও বেশি মডেল রয়েছে৷ ছবি তোলার পাশাপাশি মিনিয়েচার গাড়ি খোঁজা ও সংগ্রহ করাও তাঁর হবি বা শখ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ভ্রমণের সময় প্রায়ই সুটকেসে বেশ কয়েকটি মডেল থাকে, যেগুলির ছবি তুলতে চান তিনি৷ কিম বলেন, ‘‘গাড়ি কী ভাবে সেখানে গেলো, তা নিয়ে আমি একটা খেলা খেলতে ভালোবাসি৷ প্রথমেই তাকিয়ে দেখতে হয় সেটা বাস্তব কি না৷ বেশিরভাগ লোকই আমাকে বলেন, এতে তাঁরা আনন্দ পান৷ এতে প্রেরণা পেয়ে আমিও এই প্রকল্প চালিয়ে যেতে চাই৷''
যেখানে আস্তানা বেঁধেছেন, সেই লন্ডন শহরই তাঁর অনেক ছবির প্রেক্ষাপট৷ একেবারে ব্যাংয়ের উচ্চতা থেকে কিম ছবি তোলেন বলে ফটোগুলি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে৷ আশেপাশের মানুষ এমন কাণ্ডকারখানা সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারেন না৷ কিম বলেন, ‘‘কখনো আমি মাটির উপর শুয়ে পড়ে ছবি তুলি৷ অনেকেই তখন কটমট করে তাকায়৷ একেবারে লম্বা হয়ে শুলে কেউ কেউ প্রশ্ন করে আমার কিছু হয়েছে কিনা৷ আমি তখন বলি, না না – শুধু ছোট্ট গাড়িটার ছবি তুলছি৷''
নিখুঁত ছবি তুলতে ২২ বছর বয়সি কিম-কে ভবিষ্যতেও হয়ত এমন প্রতিক্রিয়া শুনতে হবে৷ তাঁর ‘ট্রাভেলিং কার অ্যাডভেঞ্চার্স' সিরিজ চালু থাকবে৷ শীঘ্রই তিনি সেরা ছবিগুলি নিয়ে একটি বই প্রকাশ করতে চান৷