খালেদার কারাবাস বিএনপির জন্য শাপে বর?
১১ মার্চ ২০১৮বিশ্লেষকরা কেউ কেউ এই অবস্থাকে বিএনপি'র জন্য শাপে বর অবস্থা হিসেবে দেখছেন৷ আর সরকার দলের জন্য দেখছেন উভয় সংকট হিসেবে৷ আবার কেউ কেউ মনে করছেন এটার লাভ লোকসানের হিসাব হবে আগামী নির্বাচনে৷ যা কিছু এখন রাজনীতিতে হচ্ছে তার লক্ষ্য নির্বাচন৷ দেখার বিষয় সেই নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ধৈর্য্য ধরতে পারে কিনা৷ আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরো কতদূর বিএনপিকে কোনঠাসা করতে পারে৷
জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদন্ড মাথায় নিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যান গত ৮ ফেব্রুয়ারি৷ তিনি একমাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে৷ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল করা হলেও এখনো জামিন মেলেনি৷
রবিবার হাইকোর্টে জামিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও মামলার নথি যথাসময়ে না আসায় আদেশ হয়নি৷ সোমবার আদেশ দেয়া হতে পারে৷ রবিবার বিকালে অবশ্য মামলার নথি হাইকোর্টে যায়৷ আর আপীলের কারণে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা স্থগিত আছে৷
খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরদিনই থেকেই বিএনপি প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি দিচ্ছে৷ এর মধ্যে অনশন, অবস্থান এবং মিছিল সমাবেশ অন্যতম৷ আর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সমানের এলকাকেই তারা কর্মসূচি পালনের মোক্ষম জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে৷
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও তারা কিছু কর্মসূচি পালন করে৷ কিন্তু প্রতিটি কর্মসূচিই কোনো না কোনো ভাবে বাধার মুখে পরছে৷ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে আটক করা হচ্ছে বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের৷ আর ২২ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি বিএনপি৷
মঙ্গলবার কর্মসূচি চলাকালে প্রেসক্লাবে ঢুকে অস্ত্র উঁচিয়ে বিএনপি'র স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবুকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ৷ পরদিন বৃহস্পতিবার ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমানকে রীতিমত টেনে হেঁচড়ে পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়৷ বিএনপি'র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও টানা হেঁচড়ার শিকার হন৷ বিএনপি ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের অনশন কর্মসূচি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করে দেয় পুলিশের অনুরোধে৷
পুলিশ দাবি করছে , বিএনপি সড়ক দখল করে জনসাধারণের চলাচলে বাধা দিয়ে কর্মসূচি পালন করায় তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ জবাবে বিএনপি বলছে, তারা রাস্তার পাশে কর্মসূচি পালন করছে, রাস্তা বন্ধ করে নয়৷ অভিযোগ করছে, সরকার তাদের কেনো সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না৷ রাস্তার পাশেও দাঁড়াতে দিতে চায় না৷
দেশের বড় দুই দলের এই রাজনৈতিক আচরণের ব্যাখ্যা কী? আর পরিণতিই বা কী? জবাব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি যে আন্দোলন নিয়ে মঠে নেমেছে তাতে তারা দুই দিক থেকে লাভবান হচ্ছে বলে আমি মনে করি৷ প্রথমত, খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়াকে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ৷ এখানে একটা সহানুভূতি পাচ্ছে বিএনপি৷ আর সাধারণ মানুষ সহিংস নয়,শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পছন্দ করেন৷ বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে৷ এটা করতে দিলেও সরকারের সমস্যা ৷ কারণ নির্বাচনের আগে বিএনপি এই ইস্যুতে মাঠে তাদের কর্মীদের চাঙ্গা রাখছে, সংগঠিত করছে৷ আবার সরকার বাধা দিলেও বিএনপি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাবে৷ এরই মধ্যে বিষয়টি আলোচিতও হচ্ছে যে বিএনপি'র সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু শাসক দল এবং তাদের জোটের শরীকরা নির্বিঘ্নে সভা-সামবেশ করছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় সরকার উভয় সংকটে পড়েছে৷ আর বিএনপি'র জন্য হয়েছে শাপে বর৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমি মনে করি নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে বিএনপির এই আন্দোলনের গতি আরো বাড়াবে৷ নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে৷ অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতে শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হতাশ হতে পারেন৷ কারণ যে উদ্দেশ্যে কিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে তার ফল তারা নাও দেখতে পারেন৷ আর বিএনপির আন্দোলন কতদিন শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং সরকার কতদিন এই আন্দোলন চলতে দেবে তা সময়ই বলে দেবে৷''
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘‘বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছে৷ তাই তারা এবার সতর্ক আছেন যেন তাদের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা না যায়৷ সরকার যাতে এই অজুহাত তুলে দমন-পীড়ন চালাতে না পারে৷ মনে রাখতে হবে, সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে আগামী নির্বাচনে৷ এটা নির্বাচনের বছর৷ বিএনপি চাইছে না সরকার যাতে ধরপাকড় তীব্র করার সুযোগ পায়৷ আর খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হলে সরকার লাভবান হবে কিনা তা নির্ভর করছে জনগণ এটাকে কিভাবে নেয়৷ তারা যদি মনে করে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করছে তাহলে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সরকার হয়ত বিএনপিকে আরো কোনঠাসা করতে চাইবে৷ কিন্তু সেই কোণঠাসার জবাবে বিএনপি যদি পালটা কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলেও সেই কোণঠাসারও তো একটা লিমিট হারিয়ে ফেলবে, ইমপ্যাক্ট হারিয়ে ফেলবে৷ বিএনপি যদি রিএ্যাক্ট করে তাহলে সরকারের ইমপ্যাক্ট বাড়বে৷ কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে কিছু বলতে থাকে আর ওই ব্যক্তি তার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায় তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা বলা মুশকিল৷ আমরা মনে হয় বিএনপি এখন রিএ্যাক্ট না করে শাস্তিপূর্ণ কর্মসূচিই চালাবে৷ কারণ নির্বাচনের আরো বাকি আছে৷ সরকারে হাতে ক্ষমতা আছে৷ তাই নতুন কোনো পরিস্থিতি এড়াতে চায় তারা৷ কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগে কী হবে তা এখন বলা যায় না৷''
বিশ্লেষকদের সঙ্গে আপনি কি একমত? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷