খাওয়া যখন নেশা
২৯ এপ্রিল ২০১৩এক ধরনের মানসিক অসুখ এটি৷ খেতে খেতে যখন পেটে আর জায়গা থাকে না, তখনই ক্ষান্ত দেন এই নারী৷ তবে সৌভাগ্যবশত ক্ষুধার এই আক্রমণটা পেয়ে বসে অল্পসময়ের জন্য৷ সপ্তাহে মাত্র কয়েকদিন৷
অন্য দুই ধরনের ইটিং ডিসওর্ডার ‘বুলিমিয়া' ও ‘অ্যানোরেক্সিয়া'-র মতো ওজন নিয়ে মাথা ঘামায় না বিঞ্জ ইটাররা৷ বমি করে কিংবা খেলাধুলা ও ছোটাছোটি করে ক্যালোরি কমানোর দিকে নজর নেই তাদের৷ ইটিং ডিসওর্ডারের এই ধরনটি সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই৷ অথচ ইটিং ডিসওর্ডারের প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী এই সমস্যায় ভোগেন৷ খাবারের মাধ্যমে তারা মানসিক চাপ ও ভেতরের শূ্ন্যতা দূর করতে চান৷
বিঞ্জ ইটারদের কাছে খাওয়া একটি নেশা৷ সত্যিকারের ক্ষুধা বা খাওয়ার ইচ্ছার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই৷
নেশার মতো
সান্ড্রা জানান, ‘‘অনেকে যেমন বিয়ার পান করতে পাবে ছোটেন৷ আমি ছুটি ফ্রিজের দিকে৷ হঠাৎ করেই এই চাপটা এসে যায়৷ তখন অশান্তি লাগে৷ ঠিক মাদকাসক্তদের মতো৷''
কিন্তু গপাগপ খাওয়ার পর হঠাৎ চেতনা ফিরে আসে৷ তখন লজ্জা, অনুশোচনা ও হতাশা দেখা দেয়৷ নেতিবাচক চিন্তা ঘিরে থাকে মাথায়৷ আবার সেই চিন্তাটা ঢাকতে খাবারের দিকেই হাত বাড়ান তারা৷ এ যেন ভয়ংকর এক চক্র, যা থেকে সহজে বেড়িয়ে আসতে পারেন না ভুক্তভোগীরা৷
বাড হনেফ শহরের পুনর্বাসন ক্লিনিকের ইটিংডিসওর্ডার বিভাগের প্রধান আন্ড্রেয়া হেলেসিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অন্যান্য নেশার মতোই একটা কিছু পুষিয়ে নেবার প্রবণতা থাকে বিঞ্জ ইটারদের৷ ভুক্তভোগীরা নিজেরাই জানে না, এটা আসলে কী? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মমর্যদাবোধের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সমস্যাটির৷ অথবা এর পেছনে থাকে অতীতের কোনো মানসিক আঘাত, যার ঠিকমত চিকিত্সা হয়নি৷''
সান্ড্রা বছর দুয়েক ধরে ড. হেলেসিকের কাছে চিকিত্সা নিচ্ছেন৷ ইতিমধ্যে সমস্যা কিছুটা আয়ত্তে এসেছে৷ তাঁর ভাষায়, আমি আসলে ঠিকমতো খাওয়াই শিখিনি৷ এখন আমি বুঝতে পেরেছি, খাওয়া দাওয়ার এই সমস্যার পেছনে রয়েছে শৈশবে ঘটা কোনো মানসিক আঘাত৷ এটি আমি এখন চিকিত্সা করে দূর করার চেষ্টা করছি৷''
অনেকেই স্থূলাকায়
ভুক্তভোগীদের ৪০ শতাংশই স্থূলাকায়৷ তবে সব মোটা মানুষই যে বিঞ্জ ইটার তা নয়৷ রোগটির মূল লক্ষণ হলো, হঠাৎ করে প্রচণ্ড খাওয়ার ইচ্ছা৷ এর সাথে যুক্ত হয় নিজের শরীর সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা, সমাজে চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও নানা মানসিক সমস্যা৷ ওজন বাড়ার সাথে সাথে ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মত অসুখ বিসুখও দেখা দেয়৷
সান্ড্রার ওজন ১৩৪ কিলোগ্রাম৷ তাই ঘরকন্নার কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি৷ ধোয়ামোছা করার পর দেহ আর এগুতে চায় না৷ সারা শরীর ব্যথা করে৷ চলাফেরাও কষ্টকর হয়৷
সাইকো সোমাটিক চিকিত্সার দুই বছর পর এখন ওজনের বিরুদ্ধ লড়তে চান সান্ড্রা৷ নানা রকম ডায়েটের চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় পাকস্থলী অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ এতে পাকস্থলীর অনেকটা কেটে ফেলা হয়৷ এর ফলে অল্প খেয়েই দ্রুত পেটে ভরে যায়৷
বনের ইওহানিটা হাসপাতালের ডা. মিন-সিওপ সোন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অপারেশন শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে৷ কিন্তু ইটিং ডিসওর্ডারের মূল সমস্যাটির সমাধান করতে পারে না৷ এজন্য প্রয়োজন সাইকো থেরাপি৷ অপারেশন করার পরও থেরাপি চালিয়ে যাওয়া দরকার৷''
অপারেশনের পর সান্ডার কাছে এক নতুন জীবনের পথ খুলে যায়৷ কিন্তু তাঁকে সাইকো থেরাপি চালিয়ে যেতে হবে, সেই সাথে পুষ্টি পরামর্শকেন্দ্রে শেখানো নিয়ম কানুনগুলি মেনে চলতে হবে৷ সমস্যাগুলি মনের ভেতরে পুষে না রেখে মুখ খুলতে হবে৷ তবেই হাতের মুঠোয় আসবে সাফল্য৷