ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকাই পছন্দ প্রশান্ত কিশোরের
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০এখন সরসারি রাজনীতিতে আসার প্রহর গুনছেন প্রশান্ত কিশোর৷
বছর সাতেক হলো ভারতীয় রাজনীতিতে জয় নিশ্চিত করতে এক নতুন নামের উদয় হয়েছে৷ লোকমুখে ‘ম্যাজিশিয়ান’ হয়ে উঠেছেন৷ তিনি রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর৷ নরেন্দ্র মোদী, নীতিশ কুমার, অমরিন্দর সিং এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের জয়ের পেছনে প্রশান্ত কিশোরের নেপথ্য ভূমিকা ভারতে বহুচর্চিত৷ এখন কাজ করছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের হয়ে৷ এঁরা প্রত্যেকেই মোটা টাকার বিনিময়ে পিকে-র কেম্পানি ‘আইপ্যাক’-এর সাহায্য নিয়েছেন৷
সদ্য তিনি ‘বিনা পয়সায়’ সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন বিহারের সিপিআই যুব নেতা কানহাইয়া কুমারের দিকে৷ পিকে-র সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তিনি যে দলের হয়ে কাজ করেন সেই দল ক্ষমতায় ফিরলে অনেক সময় পেশাদারিত্বের সীমা লঙ্ঘন করে রাজনীতির আঙিনায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন পিকে৷ ‘বাড়তি ক্ষমতা’ পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ অদূর ভবিষ্যতে তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন বলেও জল্পনা রয়েছে৷
আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার কয়েকটি আসনে নির্বাচন হবে৷ সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিকে-কে রাজ্যসভায় পাঠালে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এতসবের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, পেশাদার রাজনৈতিক কৌশুলী প্রশান্ত কিশোরকে ‘জেড ক্যাটাগরি’ নিরাপত্তা দিতে চলেছে সরকার, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কিছু আগে নরেন্দ্র মোদীকে নানা কৌশল জুগিয়েছেন৷ মোদীর ইমেজ বিল্ডিংয়ে সফলও হয়েছেন৷ সেই সূত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে পরের বছর ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা জনতা দল (ইউনাইটেড) প্রধান নীতিশ কুমারের হয়ে কাজ করে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন৷ পরে নীতিশের দলে উচ্চপদে বসেছেন৷ গতমাসে সেই পদ কেড়ে নিয়ে তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ এর জন্য অবশ্য সরকারি কাজে তার অত্যধিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করেন অনেকে৷
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘ভারতের মতো দেশে, যেখানে বেশিরভাগ ভোটার অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত সেখানে যে কোনো নির্বাচনে বাজার কেন্দ্রিক প্রচার, প্রসার ও বিপননের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের মতো কৌশুলীরা গুরুত্ব পাচ্ছেন৷ কিন্তু পরবর্তী কালে প্রশান্ত কিশোর তাঁর সীমা লঙ্ঘন করতে চান৷ সরকারের কাজ-কর্মে হস্তক্ষেপ করতে চান৷ আসলে ক্ষমতাবানদের সঙ্গে মেলামেশা করতে করতে উনি নিজেও ক্ষমতার স্বাদ পেতে চান বোধহয়৷ গন্ডগোলটা সেখানেই৷’’ তা পর্যবেক্ষণ, এখনো পর্যন্ত এগিয়ে থাকা দলগুলির হয়ে কাজ করে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তিনি৷ উত্তর প্রদেশে পিছিয়ে থাকা দল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে শুরু করলেও মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছেন৷
অন্যদিকে, চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দুশ্চিন্তা বাড়াতে চলেছেন পিকে৷ পিকে-র সঙ্গী হতে পারেন সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার৷ পিকে-র সঙ্গে কানহাইয়ার যোগাযোগ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই৷ পেশাদার পিকে-র পাওনাগন্ডা নিয়ে সংশয় ছিল কানহাইয়ার৷ সেই সমস্যা মিটেছে৷ এখন পিকে ও কানহাইয়া মূলত বিহারের যুব সম্প্রদায়কে নিজেদের দিকে টানতে চাইছেন৷ পিকে-র সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সখ্য রয়েছে৷ কংগ্রেসকে অনায়াসে সঙ্গে পেতে পারেন তাঁরা৷ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত দিল্লির বাইরে রাজনীতি করবেন না তিনি৷ বিহারে বামপন্থি সিপিআই, সিপিএম, সিপিআই (এমএল) দলগুলিও সঙ্গে থাকবে৷ আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদব কিছুতেই কানহাইয়া কুমারকে জায়গা ছাড়তে না চাইলেও কংগ্রেস ও বাম দলগুলি একজোট হয়ে এনডিএ-র উপর চাপ সৃষ্টি করলে আরজেডি-কে নিজেদের সঙ্গে পেতে বাধ্য করা যেতে পারে৷ অতীতে নীতিশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদবের মধ্যে জোটের অন্যতম কারিগর ছিলেন প্রশান্ত কিশোরই৷