ক্রিকেটে হতাশার হাহাকারেও রোমাঞ্চের হাতছানি
২১ জুলাই ২০২০নতুন করে থমকেও দেয়নি৷ তবু বিশ্ব মঞ্চের একটি টুর্নামেন্টের অংশ হতে না পারার হাহাকার তো থাকছেই৷
‘‘এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হওয়াটা প্রত্যাশিত মানে কী, একেবারে অপ্রত্যাশিত না৷ এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুব দুর্ভাগ্যজনক৷ এখন যদি শ্রীলঙ্কা সিরিজ না হয়, তাহলে এ বছর আর কোনো খেলাই নেই৷ অনেক দীর্ঘ বিরতি৷ আমাদের মতো ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের জন্য যা মোটেই ভালো না৷’’ নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠে বিষাদ৷ যে বিষন্নতার সুর আছড়ে পড়েছে তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ থেকে শুরু করে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের মতো তরুণ ক্রিকেটারের ভাবনার মোহনায়ও৷
তামিম অবশ্য বাস্তবতা মেনে অন্ধকারে আলো খুঁজছেন৷ মন্দে খুঁজে পেতে চাইছেন ভালোটাও, ‘‘কম-বেশি সবাই বুঝতে পারছিল যে, এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে না৷ এতে তাই অবাক হইনি৷ তবে খারাপের মধ্যেও ভালো বলতে হলে, পরের তিন বছরে তিনটি বিশ্বকাপ হবে৷ আমার হিসেবে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে৷ কারণ, বিশ্বের কোনো দেশই গত তিন-চার মাস ধরে প্রস্তুতির সময় পায়নি৷ আর বিশ্বকাপের মতো প্ল্যাটফর্মে, বিশেষত আমাদের মতো দলের জন্য প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আশা করছি, পরের বছর বিশ্বকাপটি হলে আমরা প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় পাবো৷’’
বাংলাদেশের জন্য যথাযথ প্রস্তুতিটা ভীষণ জরুরি৷ আরো বেশি প্রয়োজন টি-টোয়েন্টি দলের জন্য৷ কেন? তামিমের যুক্তিতে উঠে আসেন তরুণ ক্রিকেটাররা, ‘‘টেস্ট ও ওয়ানডের তুলনায় আমাদের টি-টোয়েন্টি দল তারুণ্যনির্ভর৷ সেই তরুণ ক্রিকেটাররা এখন আরো এক বছর সময় পেলো৷ এ সময়ে আরো ১০-১৫-২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে পারবে৷ কোনো সন্দেহ নেই, এ বছর বিশ্বকাপ হলে খুব ভালো হতো৷ কিন্তু হয়নি বলে সেটি যে আমাদের জন্য খুব খারাপ হয়েছে, আমি তা মনে করি না৷ কারণ, এখন আমাদের জন্য প্রস্তুত হবার যথেষ্ট সময় থাকবে৷’’
অন্যান্য সিরিজ বাতিলের পর বাংলাদেশকে সরাসরি যদি বিশ্বকাপে খেলতে হতো, তাহলে সেটি হতো আরেক চ্যালেঞ্জের৷ যেখানে প্রাথমিকভাবে গ্রুপ পর্বে খেলা স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে৷ এখানে সেরা দুই দলের মধ্যে থেকে মূল পর্বে ওঠার চ্যালেঞ্জ৷ দীর্ঘ বিরতির পর আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে খেললে অঘটনের আশঙ্কা যে ছিল, সেটি মেনে নিচ্ছেন হাবিবুল৷ তবে সেটিকে বড় ফ্যাক্টর মানতে নারাজ এই নির্বাচক, ‘‘ক্রিকেটের বাইরে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা অবশ্যই কঠিন৷ অঘটনের আশঙ্কাও হয়তো থাকতো৷ আবার আমি মনে করি, এটি বরং ভালো হতো৷ কারণ, আমাদের ম্যাচ প্র্যাকটিসটা হয়ে যেতো৷ আর ব্যাপার তো এমন নয় যে, বাংলাদেশ শুধু বসে আছে, বাকিরা খেলছে৷ আমার তাই মনে হয় না, অত অসুবিধা হতো৷ আর এত চিন্তিত হওয়াটাও ভালো লক্ষণ না৷ যত যাই হোক, আমি খেলার পক্ষে৷’’
এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিতের পাশাপাশি আগামী তিন বছরে তিন বিশ্বকাপ
আয়োজনের ঘোষণাও করেছে আইসিসি৷ ২০২১ ও ২০২২ সালে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি এবং ২০২৩ সালে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে৷ বিশ্বকাপ খেলার রোমাঞ্চটা ভালোই টের পাওয়া যায় অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিনের কণ্ঠে, ‘‘দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্ন৷ আমি কখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলিনি৷ ২০১৬ সালে সর্বশেষ যখন এ টুর্নামেন্ট হয়, আমিঅনূর্ধ্ব-১৯ দলে৷ তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি, নিজেকে পরিণত করে সুযোগ পেলে এ টুর্নামেন্টে খেলবো৷ সুযোগটা কাছে চলে এসেছিল৷ সুস্থ ও ফিট থাকলে হয়ত বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকতাম৷’’
সেটি এবার হয়নি৷ তবে আগামী দুই বছরে তো দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি রয়েছে৷ তাতে আবছায়ার মতো অন্য এক সুযোগের হাতছানিও দেখেন সাইফ, ‘‘মেগা ইভেন্টগুলোতে ভালো করতে পারলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে খেলার সুযোগ আসতে পারে৷ ওসব জায়গায় আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের নিয়ে যেমন মাতামাতি হয়; বাংলাদেশের বেলায় এক সাকিব ভাই ছাড়া খালিই বলা যায়৷ যখন ড্রাফটে নাম থাকে কিন্তু আমাদের প্রতি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি আগ্রহ দেখায় না, তখন খারাপ লাগে৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টগুলোর দিকে তাই তাকিয়ে থাকি৷ এখানে যদি একস্ট্রা অর্ডিনারি কিছু করতে পারি, তাহলে হয়ত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে সুযোগ পাবো৷ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য তাই এমন ইভেন্ট গুরুত্বপূর্ণ৷’’
যে সাকিবের কথা বললেন সাইফ, তিনি এখন নিষেধাজ্ঞার শেকলবন্দি৷ দুঃসহ দহনকাল পেরিয়ে সে তালা খুলবে এ বছরের ২৯ অক্টোবর৷ আগের সূচিতে ততদিনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাবার কথা৷ তাতে সাকিব খেলতে পারতেন কিনা, এ নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা৷ কারণ, নিষিদ্ধ ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে রাখা যাবে কিনা৷ এ বছরের বিশ্বকাপ স্থগিত হওয়ায় সাকিবকে ছাড়া এমন বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট না খেলার আশঙ্কা নেই বলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেকেই স্বস্তিতে৷ তবে নির্বাচক হাবিবুলের ভাবনাটি অন্যরকম, ‘‘সাকিব স্পেশাল ক্রিকেটার৷ ও থাকলে একজন বোলার বা ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলা যায়৷ ভবিষ্যতে সাকিবসহ বিশ্বকাপ খেলার সময় বিরাট প্লাস পয়েন্ট তো থাকবেই৷ কিন্তু পরের বিশ্বকাপের সময় সাকিব ইনজুরিতেও থাকতে পারে৷ আমি তাই ওভাবে ভাবতে চাই না৷ দল হিসেবে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে৷ আমি চাই খেলা হোক, এবং কারো জন্য বসে থাকতে চাই না৷’’
কিন্তু করোনা-কারাগারে আটক বাংলাদেশ ক্রিকেটে সে খেলাটিই যে হচ্ছে না! বরং বসেই থাকতে হচ্ছে৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিতের ঘোষণায় তাই হতাশা এড়ানোর সুযোগ সামান্যই৷ সে হতাশা তাড়ানোর সুযোগ আগামী তিন বছরে তিনটি বিশ্বকাপে থাকা সত্ত্বেও!
২০১৯ সালের জুলাই মাসের ছবিঘরটি দেখুন...