ক্রিকেটে কেন পারছে না বাংলাদেশ?
প্রায় দুই যুগের টেস্ট ও তার চেয়েও বেশি ওয়ানডে ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় কোনো অর্জন নেই৷ এখনো ক্রিকেটাররা ‘বড় দলের’ সঙ্গে খেলতে গেলে খাবি খান৷ কেন পারছি না আমরা?
কোথায় বাংলাদেশের ক্রিকেট?
বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? পুরুষদের ক্রিকেটে এশিয়া কাপ জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও হোঁচট খেয়েছে তারা৷ ওয়ানডেতে কখনো কখনো কিছুটা ধারাবাহিক সাফল্য দেখা গেলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে তার খুব অভাব৷ সেদিক থেকে নারীরা ২০১৮ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ জিতে একমাত্র আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে এনেছে৷ কেন এই অবস্থা? ডয়চে ভেলে কথা বলেছে ঘরোয়া ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে৷
‘ভালো মানের কোচ পাচ্ছি না’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে, ভালো ব্যাটসম্যান হতে হলে বিভিন্ন ধরনের উইকেটে, ভালো মানের উইকেটে এবং ভালো মানের বোলারের বিপরীতে প্র্যাকটিস করতে হবে৷ এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘‘আগে বাংলাদেশে কোচিংয়ের মান ভালো ছিল৷ গত ১৫ থেকে ১৭ বছর আমরা ভালো মানের কোচ পাচ্ছি না৷’’
‘ভালো মানের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি জরুরি’
ব্যাটসম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন হিমেলের মতে, ‘‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ব্যাটসম্যান হতে হলে প্রথমত দরকার ভালো মানের একাডেমি এবং ভালো মানের কোচ৷’’ ক্রিকেট কর্তৃপক্ষকে ভালো মানের অ্যাকাডেমি প্রস্তুতে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷ তিনি বলেন, যে বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের ঠ রয়েছে সে বিভাগের ক্রিকেটাররা ভালো সুবিধা পাচ্ছেন৷ অন্যান্য বিভাগে তেমন সুবিধা নেই৷
‘বড় মাঠের অভাব’
সাজ্জাদের মতো একই কথা বললেন জাতীয় দলের ব্যটসম্যান তাজ নেহার৷ ভাল মানের অ্যাকাডেমি তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি ডয়চে ভেলেকে এই নারী ক্রিকেটার আরো বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অ্যাকাডেমির সংখ্যা খুবই কম৷ মানসম্মত পিচ, নেট এবং অন্যান্য অনুশীলন সুবিধা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের বড় মাঠের অভাব, ভালো মানের কোচের আন্ডারে প্র্যাকটিস করলে এবং নিয়মিত চর্চা করলে উন্নয়ন করা সম্ভব৷’’
‘ফাস্ট বোলার তৈরির উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন’
ফাস্ট বোলার হতে হলে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, বললেন তানিয়া আক্তার৷ অলরাউন্ডারর ও ফাস্ট বোলার তানিয়া আক্তারের মতে, সুযোগ-সুবিধার অভাবে নারী ক্রিকেটারেরা পিছিয়ে থাকেন৷ তার মতে, নিয়মিত জিম করার সুবিধা, ভালো মানের কোচ এবং টুর্নামেন্টের আয়োজন করা জরুরি৷ তাছাড়া মেয়েদের জন্য নিয়মিত ক্যাম্প করারও পরামর্শ দেন তিনি৷
‘ফাস্ট বলের কৌশল শেখাতে হবে’
ফাস্ট বোলার ও অলরাউন্ডার মো. সানাউল্লাহর মতে, বিশ্ব মানের বোলার হতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম৷ প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে আয়োজন করতে হবে৷ একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ বোলিং কোচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কোচ একজন বোলারকে তার দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করতে, নতুন বল নিয়ে কাজ করতে এবং বিভিন্ন ধরনের পিচে বল করার কৌশল শিখতে সাহায্য করে৷
‘অনুশীলনে আধুনিকতা জরুরি’
স্পিনার, অলরাউন্ডার মহাদেব রায়ের মতে, একজন ভালো মানের অলরাউন্ডার হতে হলে লক্ষ্য ঠিক রেখে প্র্যাকটিস করে এগিয়ে যেতে হবে৷ তিনি বলেন, এর জন্য আধুনিক ও সুসজ্জিত অনুশীলন সুবিধা অত্যন্ত জরুরি৷ যেমন, ভালো মানের উইকেট, ব্যাটিং মেশিন, ফিটনেস সেন্টার এবং ডেটা বিশ্লেষণ সুবিধা থাকতে হবে৷ এই সুবিধাগুলো একজন খেলোয়াড়কে তার দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে৷
‘নারী ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিসের সুযোগ বাড়াতে হবে’
স্পিনার, অলরাউন্ডার নুসরাত জাহান মনে করেন, বিভিন্ন স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলার নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে৷ তার মতে, দেশে নারী ক্রিকেটাররা অনেক পিছিয়ে৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের টুর্নামেন্টের সংখ্যা কম৷ পাশাপাশি প্র্যাকটিসে সুযোগ সুবিধা কম৷’’ ক্রিকেটের উন্নয়নে এ সকল সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি৷
বিশ্বমানের কিপিং কোচের দাবি সায়েমের
উইকেট কিপার সায়েমের মতে, ভালো মানের উইকেট কিপার পেতে হলে ভালো কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কোচ একজন উইকেট কিপারের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তাকে উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারেন৷ মানসম্মত পিচ, নেট এবং অন্যান্য অনুশীলন সুবিধা একজন উইকেট কিপারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দেশের ক্রিকেটে এ সকল সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি৷
‘কোচদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি’
ক্লেমন ইন্দিরা রোড ক্রিকেট অ্যাকাডেমি কোচ মো. রিয়াজ উদ্দিন সোহেলের মতে, মানের উন্নয়ন ঘটলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোচিং ভালো অবস্থায় আছে, সেটা বলা যাবে না৷ তার মতে, বিভিন্ন অ্যাকাডেমির কোচদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷ ‘‘বিদেশি কোচদের সাথে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, কোচদের নিয়মিত মূল্যায়ন করা জরুরি৷’’
‘প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড বাড়াতে হবে’
গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের কোচ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ক্রিকেটের উন্নয়ন করতে হলে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেশে পর্যাপ্ত মাঠ নেই৷ প্র্যাকটিস করার মতো গ্রাউন্ড নেই ভালো৷ ইনডোর প্র্যাকটিসের তেমন সুযোগ নেই৷ বৃষ্টির মৌসুমে প্র্যাকটিস করার সুযোগ হয় না৷’’