ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারীর সাজার শুনানি
২৪ আগস্ট ২০২০১৫ মার্চ, ২০১৯। শুক্রবার। আর পাঁচটা জুম্মার নামাজের দিনের মতোই দিন শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। কিন্তু দিনের শেষে মানুষের স্মৃতিতে ঢুকে গিয়েছিল রক্তের ভয়াবহতা আর মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকার ছবি। প্রায় দেড় বছর পর নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন টেরান্টের সাজা ঘোষণার শুনানি শুরু হয়েছে। কঠিন নিরাপত্তার মধ্যে শুনানি চলছে নিউজিল্যান্ডের আদালতে। আগামী চারদিন বিচারপতি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনবেন বলে জানা গিয়েছে। তারপর ঘোষণা হতে পারে রায়।
হামলার সময় শ্বেতাঙ্গ ব্রেন্টন টেরান্টেরবয়স ছিল ২৮ বছর। এখন ২৯। প্রথমবার বিচারের সময় দোষ কবুল করেনি টেরান্ট। তবে পরে সে দোষ কবুল করে নেয়। ক্রাইস্টচার্চের নূর এবং লিনউড মসজিদে পরপর হামলা চালিয়েছিল সে। মৃত্যু হয়েছিল ৫১ জনের। ৪০ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ঘটনার বেশ কিছু দিন পর নিউজিল্যান্ড ব্রেন্টনের কাজকে সন্ত্রাসবাদ বলে অভিহিত করেছিল। সাজা ঘোষণার যে শুনানি সোমবার শুরু হয়েছে, সেখানে এই তিনটি বিষয়ই রয়েছে। হত্যা, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাসবাদ।
সূত্র জানিয়েছে, ব্রেন্টন স্বীকার করেছে, দুইটি নয়, তিনটি মসজিদে সে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তার ইচ্ছে ছিল, গুলি করে মানুষ মেরে মসজিদগুলি জ্বালিয়ে দেওয়ার। সে কাজ সে করতে পারেনি বলে পুলিশের সামনে রীতিমতো আফসোস করেছে সে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, এমনকী, আদালতের কাছেও স্বীকার করেছে নূর এবং লিনউডের পর অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার।
হঠাৎ করে এ কাজ করেনি ব্রেন্টন। প্রায় এক মাস ধরে হামলার পরিকল্পনা করেছিল সে। প্রতিটি মসজিদের ফ্লোর প্ল্যান জোগাড় করে নিখুঁত নকশা তৈরি করেছিল সে। কী ভাবে গোটা ঘটনা অনলাইনে দেখানো যাবে, তারও ছক কষেছিল ব্রেন্টন। বাস্তবে তাই ঘটেছে। অবাক হয়ে গোটা বিশ্ব দেখেছে, কী ভাবে জুম্মার নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মানুষ গুলিতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছেন। লুটিয়ে পড়ছেন মাটিতে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, প্রথম মসজিদ থেকে দ্বিতীয় মসজিদে পৌঁছে ফের গুলি চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী। মেরে ফেলছে কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়দের। কিন্তু ককেশনের দিকে বন্দুক তাক করেও শেষ পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছে না সে। দ্বিতীয় মসজিদের বাইরেই পুলিশ ধরে ফেলে ব্রেন্টনকে। সে কারণেই তৃতীয় মসজিদে পৌঁছতে পারেনি সে।
গ্রেফতার হওয়ার পরেও নিরুত্তাপ ছিল ব্রেন্টন। প্রথমবার শুনানির সময় আদালত চত্বরে তাকে হাসতে দেখা গিয়েছিল। যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিল নিহতদের পরিবার। সোমবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে ব্রেন্টনকে। জেলের ধূসর পোশাকে তাকে কোর্ট রুমে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। যে ঘরে শুনানি হচ্ছে, সেখানে করোনার জন্য খুব বেশি মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে আদালতের অন্যান্য ঘরে নিহতদের আত্মীয় পরিজনদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের শুনানি দেখানো হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিহতদের পরিবার শুনানিতে অংশ নিতে গিয়েছেন। বিদেশ থেকে গেলেনিউজিল্যান্ডে এখন ১৪ দিনের কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক। নিহতদের পরিবারের বহু সদস্য ১৪ দিন হাতে নিয়েই সেখানে পৌঁছেছেন। এঁদের অনেকেই আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। সাধারণত সর্বোচ্চ ১৭ বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হয় নিউজিল্যান্ডে। ব্রেন্টনের ক্ষেত্রে হবেই বলে সকলে মনে করছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রথম তার চেয়েও কড়া সাজা শোনাতে পারে নিউজিল্যান্ডের আদালত। এই প্রথম সারা জীবনের জন্য কাউকে হাজতবাসের সাজা শোনানো হতে পারে। মধ্যবর্তী সময়ে প্যারলেও মুক্তি পাবে না দোষী।
শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, ব্রেন্টনের কী সাজা হয়, তার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ফের সমস্ত নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)