ক্রাইস্টচার্চ হামলায় বেঁচে যাওয়ারা যেমন আছেন
১৫ মার্চের ক্রাইস্টচার্চ হামলার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন এই ঘটনার আহতরা৷ প্রিয়জন হারানোর শোক সামলে উঠার চেষ্টা করছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু তা কি এত সহজে সম্ভব!
আল নূর মসজিদ
জুম্মার নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিদের উপর চালানো হামলাটি শুরু হয়েছিল এই মসজিদ থেকে দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে৷ হামলাকারীর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে মোট ৪০ জন নিহত হয়েছিলেন৷ ঘটনার পরে মসজিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ ছবিতে অস্ত্র হাতে দুজন পুলিশ সদস্যকে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
বাবার স্মৃতি
ওমরের বয়স যখন ১১ তখন বাবার সাথেই প্রথম ভেড়া জবাইয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর৷ ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহত হয়েছেন হাজী দাউদ নবী৷ পিতার জন্য শান্তি কামনা করে সম্প্রতি ভেড়া জবাই করেছেন ওমর৷ দাউদ নবীর ইচ্ছা ছিল ক্রাইস্টচার্চে নিজের এক খন্ড জমিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করার৷ বাবার সেই স্বপ্ন এখন পূরণ করতে চান ৪২ বছরের ওমর৷
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
ছবির ডান পাশের ব্যক্তির নাম মার্ক রাঙ৷ তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক৷ এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করার পর প্রথমবারের মতো আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন৷ হামলায় দুই পা জখম হয়৷ অস্ত্রোপচারের পর হাঁটতে সক্ষম হয়েছেন ঠিকই কিন্তু সিডনি বিমানবন্দরে ব্যাগ উঠা নামানোর চাকরিতে আর ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় তিনি৷
প্রিয়জন শুধুই ছবি
প্রায়ই আল নূর মসজিদে সময় কাটাতেন হোসেন মোস্তফা৷ সেখানে ধর্মীয় একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলার পাশাপাশি মসজিদের খোলা জায়গায় সবজি বাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল তাঁর৷ স্ত্রী জাহরা ফাতির কাছে এখন এই ছবির অ্যালবামই তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি৷ প্রিয়জন হারানোর বেদনা ভুলতে জাহরা এবারের রমযান কাটাতে চান মিশরে স্বজনদের কাছে৷
ভালবাসার বার্তা
ক্রাইস্টচার্চে বসবাসরত বাংলাদেশি ফরিদ আহমেদ হারিয়েছেন তাঁর স্ত্রীকে৷ হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি গোটা বিশ্বে৷ দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য গত রোববার প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি৷ ছবিতে তাঁদের কয়েকজনের সাথে প্রার্থনারত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে ফরিদ আহমেদকে৷
এখনও শোনেন গুলির শব্দ
ক্রাইস্টচার্চের হামলার ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের একজন সর্দার ফয়সাল৷ সেদিন তিনি মসজিদে কিছুটা দেরিতে গিয়েছিলেন৷ নামাজের জন্য তিনি যখন ওযু করছিলেন তখনই হামলার ঘটনা ঘটে৷ লুকিয়ে থেকে বেঁচে যান ফয়সাল৷ কিন্তু প্রতিটি গুলির আওয়াজ এখনও যেন তাঁর কানে বাজে৷ ঘটনার পরে আর কাজে ফেরেননি ফয়সাল৷ নিহতদের পরিবার আর আহতদের জন্য খাবারের যে আয়োজন রয়েছে রাতদিন তার সমন্বয় করছেন তিনি৷
বেদনা আর আনন্দের অশ্রু
ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারীর ঠিক সামনেই ছিলেন হাজেম মোহাম্মদ৷ কিন্তু শুয়ে পড়ে মারা যাওয়ার অভিনয় করেন তিনি৷ তাঁর আশেপাশে তখন মৃত আর আহতদের দেহ৷ হাজেম মোহাম্মদ বলেন, ‘‘আমি দুটি কারণে কাঁদছিলাম৷ প্রথমত বন্ধুদের হারিয়েছি এজন্য৷ দ্বিতীয়ত ১৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে আমার পুনর্জন্মের আনন্দের জন্য৷’’
শান্তির ধর্ম ইসলাম
ক্রাইস্টচার্চ হামলার ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ে উঠেছে৷ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তেমনি মুসলিমরাও ভালোবাসা আর শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বে৷ আল নূর মসজিদের ঘড়িতে কোরআনের বাণীও তারই অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, ‘‘আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছে৷’’