ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার রিপোর্ট পেশ
৮ ডিসেম্বর ২০২০ক্রাইস্টচার্চ হামলা নিয়ে দীর্ঘ রিপোর্ট পেশ করল নিউজিল্যান্ড। রয়্যাল কমিশনের এই রিপোর্টে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। রয়্যাল কমিশন জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ বন্ধের জন্য আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন দেশে। তবে ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে হামলা রোখা যেত বলে মনে করেনি কমিশন।
২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল এক দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসী। বন্দুক নিয়ে সে মসজিদে ঢুকে সাধারণ মানুষের উপর বুশ ফায়ার করেছিল। গোটা ঘটনা ক্যামেরায় রেকর্ডও করেছিল। ঘটনায় ৫১ জন সাধারণ মুসলিমের মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনার পর অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। অতি সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের আদালত তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে।
২০২০ সালের গোড়ায় রয়্যাল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা প্রকাশ পেতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে গিয়েছে। ৮০০ পাতার রিপোর্টে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চাইলে এই হামলা বন্ধ করা যেত, এমন কথা বলা যায় না। কারণ, আক্রমণকারী ব্যক্তি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। জঙ্গি মতবাদ নিয়ে সে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে এমনও নয়। এক সময় সে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতো তার বাবার সঙ্গে। সেখান থেকে বিশ্ব ভ্রমণে গিয়েছিল সে। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে থাকতে শুরু করে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মাঝেমধ্যে উগ্র কথা বললেও সন্দেহ করার মতো কোনো ঘটনা সে ঘটায়নি। ফলে গোয়েন্দারা এই হামলার জন্য দোষী করা যায় না। তাদের পক্ষে আগাম খবর জোগার করে এই হামলা বন্ধ করা সম্ভব ছিল না।
৪৪টি আইন এবং প্রশাসনিক সংশোধনের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দার্ন বলেছেন, প্রতিটি বিষয় নিয়েই তিনি মন্ত্রিসভায় আলোচনা করবেন। কমিশনের রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে ভাবে অস্ত্র কিনেছিল ওই ব্যক্তি, তা রোধ করা সম্ভব।
নিউজিল্যান্ডে থাকতে শুরু করার পর ওই ব্যক্তি তার এক গেমিং ফ্রেইন্ড বা বন্ধুর কাছে সাহায্য করেছিল। ওই বন্ধু এবং তার বাবা সন্ত্রাসীর চরিত্রের সার্টিফিকেট দিয়েছিল। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে বন্দুক কেনার ছাড়পত্র নিতে গিয়েছিল সন্ত্রাসী। পুলিশ সাক্ষাৎকার নিলেও মূলত ওই সার্টিফিকেটের উপর ভরসা করে তাকে অস্ত্র কেনার লাইসেন্স দিয়েছিল। রিপোর্ট বলা হয়েছে, অস্ত্র কেনার এই প্রক্রিয়া আরো কঠোর করা উচিত।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং ইউটিউবে নজরদারি বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে রিপোর্টে। উগ্র মতামত যারা প্রকাশ করছে, তাদের নজরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চ হামলার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারও রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে দিকে নজর রাখুক প্রশাসন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)