সাগর গবেষণা
২ এপ্রিল ২০১২পৃথিবী থেকে অনেক উপরে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার কথা জানা গেলেও নীচে, মানে, সাগরের একেবারে তলদেশ নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের খবর আমরা তেমন একটা জানি না৷
তবে ইদানিং এই বিষয়ে গবেষকদের আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে জেমস ক্যামেরন ঘুরে এলেন প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে গভীর থেকে, যার নাম ‘মারিয়ানা ট্রেঞ্চ'৷ এটি প্রায় ১১ কিলোমিটার গভীর৷ সেখানে পানির চাপ এতটাই যে, ফিরে আসার পর ক্যামেরন দেখেন যে ডুবোজাহাজে করে তিনি সেখানে গেছেন সেই ‘ডিপসি চ্যালেঞ্জার' দৈর্ঘ্যে খানিকটা ছোট হয়ে গেছে৷
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ'এর অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঞ্চল, যার নাম গুয়াম, সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে৷
ক্যামেরন প্রায় সাত বছর ধরে এই অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন৷ এজন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ডিপসি চ্যালেঞ্জার নামের ডুবোজাহাজটি৷ সাত মিটার লম্বা এই ডুবোজাহাজের যেখানে ক্যামেরন বসেছিলেন সেটা খুব পুরু ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ আর বাকি অংশ তৈরি করা হয়েছে ‘সিনট্যাকটিক ফোম' নামের উপাদান দিয়ে৷ বেশ কয়েক ধরণের ক্যামেরা ও লাইট ছিল ঐ ডুবোজাহাজে৷ যেটা দিয়ে সাগরের একেবারে তলদেশের ছবি তোলা হয়েছে৷ এছাড়া ডুবোজাহাজে ছিল ‘রোবটিক হাত' যেটা দিয়ে পাথর ও মাটি জোগাড় করা হয়েছে৷ তবে মাঝখানে হাইড্রলিক সিস্টেমে গণ্ডগোল দেখা দেয়ায় এই হাতটি অচল হয়ে পড়ে৷ ফলে প্রত্যাশা মতো উপাদান নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি বলে জানান ক্যামেরন৷
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ'এ যেতে ক্যামেরন'এর দু'ঘন্টা সময় লেগেছে৷ সেখান ছিলেন তিন ঘন্টা৷ এরপর ফিরে আসেন৷ তিনি যে জিনিসগুলো নিয়ে এসেছেন সেগুলো গবেষণা কাজে লাগানো হবে বলে জানা গেছে৷ ফিরে আসার পর ক্যামেরন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমি অন্য কোনো পৃথিবীতে চলে গিয়েছিলাম, যেখানে কেউ নেই৷ আশপাশ ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার৷'' তবে চিংড়ির মতো এক ধরণের প্রাণীর দেখা তিনি পেয়েছেন বলে জানান ক্যামেরন৷
স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের স্ত্রী মারিয়ানা'র নামে রাখা এই ট্রেঞ্চ'এ এর আগে মাত্র দুজন যেতে পেরেছেন৷ সেটা প্রায় ৫২ বছর আগে৷ এঁরা হলেন সাবেক মার্কিন নৌ কর্মকর্তা ডন ওয়ালশ এবং সুইস নাগরিক জাক পিকার৷ তাঁরা তাঁদের ‘ত্রিয়েস্ত' ডুবোজাহাজে করে সেখানে গিয়েছিলেন৷ তবে তাঁরা মাত্র ২০ মিনিট থেকেছিলেন৷ এই দু'জন আর ক্যামেরন'এর মাঝে আর কেউ মারিয়ানা ট্রেঞ্চ'এ যাওয়ার সাহস করেন নি৷
সেই ছোট্টবেলা থেকেই ক্যামেরন'এর ‘ডাইভিং' এর প্রতি ঝোঁক ছিল৷ বিখ্যাত ছবি ‘টাইটানিক'-এ ডুবে যাওয়া টাইটানিকের যে ভেঙে যাওয়া অংশগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো ক্যামেরন নিজে ধারণ করেছিলেন৷ এই অংশগুলো রয়েছে সাগরের ৩.৮ কিলোমিটার গভীরে৷ ক্যামেরন সেখানে ১২ বার গেছেন৷ এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মোট ৬০ বার সাগরের গভীরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল ‘আভাতার' বা অবতারখ্যাত ছবির এই পরিচালকের৷
গবেষণার কাজে বিজ্ঞানীরা দু'বার মনুষ্যবিহীন যান পাঠিয়েছেন মারিয়ানা ট্রেঞ্চ'এ৷ এর একটি পাঠিয়েছে জাপান, ১৯৯৫ সালে৷ আর অন্যটি অ্যামেরিকা, ২০০৮ সালে৷
এদিকে ব্রিটিশ বিলিওনেয়ার ভার্জিন গ্রুপের প্রধান রিচার্ড ব্রানসেন অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের সবচেয়ে গভীর এলাকা পুয়ের্টো রিকো ট্রেঞ্চ'এ যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ আর গুগলের এরিক স্মিডট একটি ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য মার্কিন এক কোম্পানিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন৷ এই ডুবোজাহাজে করে দু'তিনজন মানুষ সাগরের গভীরে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করাই এই ডুবোজাহাজ তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে৷
এদিকে বিজ্ঞান ছাড়াও পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ডুবোজাহাজ বানাচ্ছে মার্কিন আরেক কোম্পানি৷ তারা প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার করে একেকজন উৎসাহী পর্যটককে সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে৷
সুতরাং কিছুদিনের মধ্যে মহাকাশ অভিযানের মতো সাগর অভিযানের কথাও যে আমরা হরহামেশা শুনতে পাবো, সেটা বোঝা যাচ্ছে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ