ক্যানাডার বিষয়ে মার্কিন-ব্রিটিশ চাপ সামলাতে পারবে ভারত?
২০ অক্টোবর ২০২৪ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ক্যানাডার নাগরিক, বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজার হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য৷ ক্যানাডার দাবি, শিখদের জন্য খালিস্তান নামে মাতৃভূমির দাবিতে চালিয়ে যাওযা আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত৷
গত বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তিনি ভারতের সাথে কোনো বিতণ্ডা সৃষ্টি হয় এমন পরিবেশ তৈরি করতে চান না৷ কিন্তু ভারত ক্যানাডার সার্বভৌমত্ত্ব লঙ্ঘন করেছে৷
ট্রুডো বলেন, ‘‘ভারত সরকার ক্যানাডার নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ত্বে আগ্রাসীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এমনটা ভেবে ভয়াবহ ভুল করেছে৷ ক্যানাডিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের উত্তর দিতে হবে৷''
তবে ক্যানাডার সরকার প্রধানের এমন অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক এবং অসংগত' বলে অভিহিত করেছে ভারত৷
ভারতের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত: যুক্তরাষ্ট্র
হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে ক্যানাডা ও ভারতের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে, দেশ দুটি কূটনীতিকদেরকে নিজ নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে৷
এদিকে গত মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভারতের উচিত ক্যানাডার অভিযোগ ‘গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা' এবং ‘ক্যানাডাকে তদন্তে সহায়তা করা'৷
একদিন পর যুক্তরাজ্য এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে ক্যানাডার মিত্রদের সাথে যোগাযোগ করছে দেশটি৷ ‘‘ক্যানাডার বিচারব্যবস্থার উপর যুক্তরাজ্যের পূর্ণ আস্থা রয়েছে৷ সার্বভৌমত্ত্ব এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷''
সাময়িক টানাপোড়েন?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাথে ভারতের সম্পর্কে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না৷
‘‘যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সাথে আমাদের গভীর ও শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে৷ ক্যানাডার অভিযোগের ফলে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে আমাদের সহযোগিতার সস্পর্কের অবনতি ঘটবে না৷''
অনেকটা একই সুরে কথা বললেন মন্ত্র ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট শান্থি ম্যারিয়েট ডি'সুজা৷
তার মতে, ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সাথে নতুন দিল্লির সম্পর্ক বহুমাত্রিক৷ কোনো একটি ঘটনা পুরো সম্পর্ককে প্রভাবিত না করার সম্ভাবনাই বেশি৷
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সম্পর্ক যা-ই হোক না কেন, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের সুনামকে ক্ষুন্ন করবে৷
ভারতের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে নতুন দিল্লি শক্তিশালী মিত্র এমন বিবেচনায় সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের৷
সামরিক খাতেও দেশ দুটি পরস্পরের কাছে আসছে৷ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক ড্রোন কেনার জন্য চার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দিল্লি৷
এদিকে সম্পর্ক দৃঢ় করতে এগিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যও৷ এরই মাঝে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি করার পথে৷ খুব দ্রুতই এই চুক্তি আলোর মুখ দেখবে বলে জানা গেছে৷
সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং প্রফেসর সি রাজা মোহন বলেন, ফাইভ আইজ-এর দেশগুলোর সাথে এখনকার মতো এত ভালো সম্পর্ক কখনোই ভারতের ছিল না৷ ফাইভ আইজ হলো অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি গোয়েন্দা জোট৷
এই গবেষক অবশ্য শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ক্যানাডার অবস্থানের সমালোচনা করেন৷ তার মতে, বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়ার নামে অপরাধী চক্র এবং ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবিদীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে না৷ প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করার পরিবর্তে এমন বিষয় ওই দেশের কর্তৃপক্ষকেই সামলাতে হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলী কূটনীতি
ক্যানাডার অভিযোগের পর ভারত যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দেখানো প্রতিক্রিয়ার চেয়ে পরিস্কারভাবে ভিন্ন৷
ভারতের বিরুদ্ধে এমনই আরেক অভিযোগ এনেছে যুক্তারাষ্ট্র৷ নিউইয়র্কে খালিস্তানপন্থি আরেক নেতা অ্যামেরিকা-ক্যানাডার নাগরিক গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুর হত্যার চেষ্টায় ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ওই ঘটনার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে দিল্লি৷
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, হত্যা নির্দেশ প্রদান করা যেই গুপ্তচরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভারত সরকারের সাথে যুক্ত নয় বলে জানিয়েছে দেশটি৷
ক্যানাডায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়ার মতে, ৷ ক্যানাডার মতো তারা এটিকে রাজনৈতিক খাতে প্রবেশ করতে দেয়নি৷
এই কূটনীতকের মতে, ফাইভ আইজ জোটের কূটনৈতিক গঠনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষে ক্যানাডাকে রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷
তবে বিসারিয়ার মতে, সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো ভারতের উপর খুব বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না৷ ভারতের সাথে ভূ-রাজনৈতিক যেই মিত্রতা তার পুনর্গঠন হবে না৷ ভারত এই দেগুলোর বিশ্বস্ত মিত্র৷
মুরালি কৃষ্ণান/আরআর