কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ-চীনের নতুন কূটনীতি?
১১ মে ২০২১তিনি আরো বলেন, ‘‘ বাংলাদেশ এধরনের কোনো জোটে যুক্তও নয়৷''
রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলেও অভিহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে বলে ফেলেছেন৷
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ঢাকায় মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করেই বলেছেন,‘‘ বাংলাদেশ কোয়াডে অংশ নিলে চীনের সাথে সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ হবে৷''
কোয়াড্রালেটারাল সিকিউিরিটি ডায়ালগে (কোয়াড) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত সদস্য৷ ২০০৭ সাল থেকে এই জোট কাজ শুরু করে৷ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌপথে চলাচল স্বাধীন ও নিরাপদ রাখার উপায় খুঁজতে এই জোট কাজ শুরু করে৷ প্রকাশ্যে এটাকে সামরিক জোট বলা না হলেও এটা সামরিক জোট হিসেই কাজ করছে বলে বলা হচ্ছে৷ এই জোটকে তাই এশিয়ার ন্যাটোও বলা হচ্ছে৷ এটাকে চীনবিরোধী জোট হিসেবেও বিবেচনা করা হয়৷ ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যও আছে এই জোটের৷ তবে বাংলাদেশ যে কোয়াডে যুক্ত হবে তার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা কোনো তৎপরতা এখনো স্পষ্ট নয়৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাথে কোয়াডের কোনো কথা হয়নি৷ তারা কোনো যোগাযোগও করেনি৷ আমরাও না৷ চীনা কূটনীতি খুব স্বচ্ছ এবং ভদ্রোচিত৷ তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না৷ কিন্তু চীনের রাষ্ট্রদূত এমন কেন করলেন তা বুঝতে পারছি না৷ ওনার হয়তো ধারণা হয়েছে কোয়াড আমাদের ডাকছে৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘চীনের মন্ত্রী যে ঢাকায় এসেছিলেন তিনিও এ ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করেননি৷ আমার সাথে দেখা হয়নি৷ কিন্তু চীনের কোনো ইস্যু থাকলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমই জানানোর কথা৷ আমি কিছু জানি না৷''
কোয়াডে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার কোনো আগ্রহ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিই৷ আর কোনো ডিফেন্স প্যাক্ট-এ আমাদের যোগদানের কোনো আগ্রহ নেই৷ আমরা কোনো আঞ্চলিক সামরিক জোটে যুক্ত নই৷ আমাদের নীতি হলো সবার সাথে বন্ধুত্ব৷ কারুর সাথে শত্রুতা নয়৷''
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল(অব) মুনীরুজ্জামান মনে করেন, চীনা রাষ্ট্রদূত যে কথা বলেছেন তা বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্ক বার্তা৷ বাংলাদেশ কোয়াডে যুক্ত হচ্ছে বা কোনো ধরনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে এমন কোনো তথ্য এখনও নেই৷ কূটনীতিতে এরকম সতকর্ বার্তার নজির আছে৷
‘‘তবে কোয়াড যে চীনের বিরুদ্ধে একটি জোট তা স্পষ্ট৷ এই জোট ভারত মহাসাগর এবং এই অঞ্চলে চীনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে চায়৷ আর তারা মহাসাগরে স্বাধীন চলাচল ও নিরাপত্তার বাইরেও করোনার ভ্যাকসিনসহ আরো অনেক ইস্যু নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছে৷ চীন এর আগেও কোয়াডের ব্যাপারে তার অবস্থান জানিয়েছে,'' বলেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক৷ তিনি মনে করেন, তাই কোয়াডের ব্যাপারে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে৷ এটা খুবই একটি স্পর্শকাতর বিষয়৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা ৪০ বিলিয়ন ডলারের৷ তার মধ্যে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়ে গেছে৷ তাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে তারা চাইবে বাংলাদেশ যেন চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো আন্তর্জাতিক জোটে যোগ না দেয়৷
তিনি বলেন, ‘‘এটা প্রকাশ্যে সামরিক জোট না হলেও এর উদ্দেশ্য সামরিক৷ বিশেষ করে ভারত মহাসগরে তারা চীনের প্রভাব খর্ব করতে চায়৷ তাই বাংলাদেশ যাতে কোনো সহযোগিতা না করে সেটা তারা নিশ্চিত হতে চায়৷ কারণ চীন মনে করে তাদের বিনিয়োগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ ওই জোটের সহযোগী হলে চীনের বিরুদ্ধেই তা ব্যবহার করা হতে পারে৷''