‘কোনোদিন ভুলো না!'
২৭ জানুয়ারি ২০১৫একটি বিভীষিকাময় স্থান: আউশভিৎস৷ মানুষ যে কতটা অমানুষিক হতে পারে, জার্মানরা যে বিভিন্ন দেশের মানুষদের কী পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে, আউশভিৎস-এ এসে সে কথা ভাবলে নীরব হয়ে যেতে হয়৷
আউশভিৎস থেকে যাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন, তাঁদের অনেকেই আর কখনো এখানে ফিরে আসেননি৷ জিন আমেরি, টাডেউস বোরোভস্কি, প্রিমো লেভি, এঁদের কেউই তাঁদের নিজেদের বেঁচে থাকাটাকে ক্ষমা করতে পারেননি এবং আউশভিৎস মুক্ত হবার বহু বছর কিংবা দশক পরেও আত্মহত্যা করেছেন৷ সে বিভীষিকার কোনো শেষ নেই, মুক্তি নেই৷ থেকে গেছে স্মৃতি ও বেদনা৷ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আসছেন এখানে, যাঁরা শিশুবয়সে বাবা-মা, ভাইবোনকে হারিয়েছেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাননি, কখন সেই প্রিয়জনের হাত ছেড়ে দিতে হয়েছে৷
শেষবারের মতো
এই মঙ্গলবারেও আউশভিৎস-বির্কেনাউ-এর শত শত সাবেক বন্দি, যারা প্রাণে বেঁচেছেন, তাঁরা আবার সেই বিভীষিকার স্থলে ফিরেছেন – এদের অধিকাংশই ইহুদি, সেই সঙ্গে প্রায় একশো পোলিশ বন্দিও ফিরেছেন৷ শেষবারের মতো ‘‘কালের সাক্ষীরা'' এমন বিপুল সংখ্যায় এখানে সমবেত হয়েছেন৷ আমাদের উচিত, তাঁদের কাহিনি শোনা, যতোদিন পর্যন্ত সে কাহিনি না স্তব্ধ হয়ে যায়৷ তারপর সেই কাহিনি থাকবে আমাদের দায়িত্বে৷
আউশভিৎস-এর মুক্তিদিবসকে নাৎসি অপশাসনের শিকারদের স্মারক দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে জার্মানদের ৫০ বছর সময় লেগে গেছে৷ এবার সংসদে আউশভিৎস-এর কোনো সাবেক বন্দি নন, বরং জার্মান প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বক্তব্য রাখবেন৷ এই স্মারক সভা কি সফল হবে? জার্মানরা কি সত্যিই তাদের চিরন্তনী দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী ৮১ শতাংশ জার্মান ইহুদি নিপীড়নের ইতিহাসকে ‘‘পিছনে ফেলে দিতে'' চান৷ অপরদিকে জার্মানিতে যে সব নাৎসি বন্দিশিবিরের অবশেষ বর্তমান, সেখানে দর্শকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ গত বছর ১৫ লক্ষ মানুষ আউশভিৎস-বির্কেনাউ-তে আসেন, যা কিনা একটা রেকর্ড৷ এর অর্থ: হলোকস্টের স্মৃতি আজও জাগরূক, কিন্তু তা আর স্বভাবসিদ্ধ নয়৷ আজও জার্মানিতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যে কোনো না কোনো সময় একটি না একটি নাৎসি বন্দিশিবির পরিদর্শন করবে, সেটা স্বভাবসিদ্ধ নয়৷ কেন নয়?
সজাগ থাকো, শুধু ভঙ্গিমায় আটকে থেকো না
বিভিন্ন দক্ষিণপন্থি আন্দোলন, নতুন ধরনের প্রতিবাদ, ইন্টারনেটে অবলীলাক্রমে বহিরাগত-বিদ্বেষ কিংবা জাতিবাদী আক্রোশ প্রচার করা, প্রকাশ্য মঞ্চে মাইক-এর সামনেও – এ সব থেকে আজ বোঝা যাচ্ছে, নাৎসি নিপীড়নের সেই বিপর্যয়মূলক স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখাটা ঠিক কতোটা প্রয়োজন৷ শুধু বন্দিশিবিরে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই নয়, বরং আমাদের নিজেদের সমাজব্যবস্থার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে, কেননা সেই সমাজকে মানবিক থাকতে হবে, অমানুষিক হলে চলবে না৷