1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কী হচ্ছে?

৩ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশে সব ধরনের চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতরা শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মারধর ও হামলার শিকার হচ্ছে৷ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন নিখোঁজ  বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/30kG9
Dhaka Universität Demonstration Lehrer und Eltern
ছবি: bdnews24.com

ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল সংসদে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোনো ধরনের কোটাই আর থাকবে না৷ সব ধরনের কোটা তুলে দেয়া হবে৷ আর এ নিয়ে কাজ করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনাও দেয়া হয়৷ কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি৷ সোমবার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ‘‘সহসাই কোটা সংস্কার হচ্ছে না৷ আরো সময় লাগবে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘কমিটি এখনও কাজ শুরু করেনি৷ কোটা সংস্কারের বিষয়টি আপনারা যতটা সহজ মনে করেন কাজটা তত সহজ নয়৷ এটি অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কাজ৷ এখন নীচু লেভেলে কাজ চলছে৷ ওপর লেভেল পর্যন্ত আসতে তো কিছুটা সময় লাগবে৷ এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়৷''

কিন্তু বিকেলে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটা সংস্কারে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে৷ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে৷

‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার তিসমাসেও কোটা সংস্কারের কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি’

কিন্তু এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোনকারীরা শনিবার হামলার শিকার হন৷ রবি ও সোমবারও তাঁদের ওপর হামলা হয়৷ আটক করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদকে৷ আর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরেক নেতা নুরুল৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্ববায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার তিন মাসেওকোটা সংস্কারের কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি৷ তাই শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে আমরা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকি৷ সেখানেই আমাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ৷ এরপর আন্দোলনকারীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করা হয়৷এর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীদের ওপরও হামলা হয়৷ হামলায় আমি ও নুরুলসহ কয়েকজন আহত হই৷ রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়৷''

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘সোমবারও শহীদ মিনারে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ৷ রাশেদসহ আমাদের চারজন শিক্ষার্থী  নিখোঁজ আছে৷ তারা কোথায় আমরা জানি না৷ আবারো হামলার আশঙ্কায় আছি৷ হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ ঢাকায় আমরা বাইরে বের হতে পারছি না৷''

তিনি বলেন, ‘‘প্রধামন্ত্রী কোটা সংস্কারের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা তিন মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি৷ আমরা তো মাঠে থাকতে চাই না৷ আমাদেরও তো পড়শুনা আছে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব সোমবার সকালে বলেন, সহসা কোটা সংস্কার হবে না৷ আর বিকেলে সরকার সংস্কারের জন্য কামিটি গঠন করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে৷ এই কমিটি যদি আগে গঠন করা হতো. যদি ঠিক সময়ে প্রতিবেদন দেয়া হতো, তাহলে এই নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না৷ আমরা চাই, কোটা সংস্কারে আর দেরি করা হবে না৷ আটকদের ছেড়ে দিতে হবে, আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দিতে হবে এবং হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আইনের আওতায় আনতে হবে৷''

‘হামলার ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি’

এই হামলার জন্য সরাসরি যাদের দায়ী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন হলেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান৷ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা হামলা করিনি, আমরা তাদের প্রতিহত করেছি৷ আমরাও কোটা সংস্কারের  পক্ষে৷ প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন৷ কিন্তু জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলের কিছু লোক এই ইস্যু ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল৷ আমরা তাদের তা করতে দেইনি৷ আমরা ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করছি৷''

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলার ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি৷ দু-একজন ছাত্র ব্যাক্তিগত পর্যায়ে কথা বলেছেন৷ আমরা তা সেভাবেই দেখছি৷ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো বাইরের ইস্যু নিয়ে  বিশৃঙ্খলা করতে দেবো না৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার দয়িত্ব ছাত্রলীগের কিনা– এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইজারা দেয়া হয়নি৷ এখানে প্রশাসন আছে, নিয়ম আছে৷ ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে আমরা এখানকার শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষা করি৷''

এদিকে যাকে নিখোঁজ বলা হচ্ছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সেই ফারুক হাসানকে মঙ্গলবারই শাহবাগ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে৷ ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে৷'' তার সঙ্গে তরিকুল ইসলাম এবং জসিমউদ্দিন নামে আরো দু'জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷

‘আমরা হামলা করিনি, তাদের প্রতিহত করেছি’

ফারুককে রবিবার ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন রহমান শহীদ মিনার এলাকা থেকে তুলে নিয়ে থানায় দিয়ে আসে৷

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হয়৷ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷

১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে কমিটি গঠনের কথা বললেও বাস্তবে কমিটি গঠন হলো সোমবার, অর্থাৎ সেই ঘোষণার তিন মাস পর৷

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য দিন, লিখুন নীচের ঘরে৷