চলতি বছর ডিডাব্লিউ ৭০ বছরে পা দিলো৷ এতকাল আমরা আমাদের শ্রোতা, দর্শক ও ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও উচ্চ মানের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করে এসেছি৷ একই সঙ্গে আমরা গত দশকগুলিতে নিজেদের বিকাশ ঘটিয়ে এসেছি৷ প্রযুক্তিগত উন্নতি দ্রুত গ্রহণ করে যুগের দাবি মেনে মাল্টিমিডিয়ার উপর জোর দিয়েছি৷ ব্যবহারকারীদের আচরণ অনুযায়ী আমরা রেডিও, টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবসময় উপস্থিত৷ উচ্চ মানদণ্ড বজায় রেখেই আমরা সাংবাদিকতার ধারার সঙ্গে বার বার নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি৷
আজ আমাদের সামনে পরবর্তী বড় পরিবর্তন হাতছানি দিচ্ছে৷ ‘ডিসরাপ্টিভ' বা ব্যাঘাতমূলক শক্তি হিসেবে জেনারেটিভ এআই অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চলেছে বা এখনই সেই পরিবর্তন টের পাওয়া যাচ্ছে৷ সাংবাদিকতাও সেই ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ স্বচ্ছতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি আমাদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই-এর প্রয়োগ সম্পর্কে জানাতে চাই৷
সাংবাদিকেরাই কনটেন্ট তৈরি করেন – এআই নয়
জেনারেটিভ এআই আমাদের সাংবাদিকদের কাজের বিকল্প হয়ে উঠবে না৷ আপনারা ডিডাব্লিউ-র কোনো কনটেন্ট পড়া, দেখা বা শোনার সময়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন, যে ডিডাব্লিউ-র সম্পাদকেরাই সেটির দায়িত্ব বহন করছেন৷
আমাদের সাংবাদিকেরা উচ্চমানের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ নিরপেক্ষতা, যত্ন, স্বচ্ছতা, শ্রদ্ধাবোধ, মত প্রকাশের বৈচিত্র্য এবং ডাইভার্সিটির প্রতি আমাদের আনুগত্যের কোনো ব্যতিক্রম নেই৷
একই সঙ্গে আমরা জেনারেটিভ এআই নিয়ে কাজ করে দেখতে চাই, এই প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের কাজে সহায়ক হতে পারে৷ ডিডাব্লিউ ইতোমধ্যেই এআই-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে৷ যেমন কোনো কনটেন্টের জন্য বিশাল পরিমাণ তথ্য ঘেঁটে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অথবা এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে এমন টুল কাজে লাগানো হচ্ছে৷ তবে আমাদের সাংবাদিকেরাই সেই কনটেন্টের মান পরীক্ষা করছেন৷ যেমন সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধানের ফল আরো ভালোভাবে পেতে আমরা এআই ব্যবহার করতে পারি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণাভরা মন্তব্য দ্রুত শনাক্ত করতেও এআই সাহায্য করতে পারে৷ এই প্রযুক্তির সাহায্যে ভিডিওয় সাবটাইটেল যোগ করে আরো বেশি মানুষের কাছে সেটি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব৷ এমন সার্থক প্রয়োগ আমাদের সাংবাদিকতার কাজে সহায়ক হতে পারে৷
এমন অবস্থায় এই সব টুল ব্যবহার করে কনটেন্ট প্রকাশের আগে আমাদের সাংবাদিকদের সব সময় সেটির মান পরীক্ষা করে দেখা অত্যন্ত জরুরি৷ সেই সঙ্গে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে৷ জানাতে হবে, কোথায় আমরা এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি৷
চ্যাটজিপিটি-র মতো চ্যাটবট মোটেই তথ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস নয়৷ এগুলি নতুন আইডিয়া বা প্রেরণা জোগাতে পারে বটে, কিন্তু খাঁটি তথ্য নয়৷ তাছাড়া এআই- চ্যাটবট মারাত্মক ভুলও করে৷ কোথা থেকে লেখা আসছে সে বিষয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতাও নেই৷ চ্যাটবট থেকে কোনো ফল পাওয়া গেছে, এমনটা জানলে আমরা সেগুলি আরো ভালোভাবে পরীক্ষা করবো৷ সেই সঙ্গে আমরা আমাদের ‘ফ্যাক্ট চেকিং' সংক্রান্ত কাজের আরো সম্প্রসারণ ঘটাবো৷ কারণ বিশ্বজুড়ে জেনারেটিভ এআই-এর প্রসারের কারণে ভুয়া খবরের সংখ্যাও বাড়তে চলেছে৷ সাংবাদিক হিসেবে ‘ডিসইনফর্মেশন' বা গুজবের ভোল খোলা আমাদের কর্তব্য৷
এআই-জেনারেটেড ছবি
এআই প্রযুক্তি দিয়ে সৃষ্টি করা ফটোর মতো নিখুঁত ছবি প্রকাশের মূল্য আমরা দেখছি না৷ অন্যের সৃষ্টি করা এমন ছবি ব্যবহার করলেও আমরা তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে করবো৷ জটিল তথ্য ছবির আকারে সহজে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই জেনারেটিভ এআই সাহায্য করতে পারে৷
চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
জেনারেটিভ এআই-এর মধ্যে যে বিপদ লুকিয়ে রয়েছে, আমরা সে বিষয়ে সচেতন৷ অতীতের তুলনায় অনেক বড় আকারে ভুয়া খবর প্রসারের পেছনে এই প্রযুক্তি কাজ করতে পারে৷ সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা বা কুসংস্কারের ভিত্তিতে সেই খবর সৃষ্টি করা হতে পারে৷ এমন ত্রুটি শনাক্ত করতে আমরা আমাদের সাংবাদিকদের ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে যাবো৷ এআই সংক্রান্ত পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যক্তিজীবনের গোপনীয়তার বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দেবো৷
এআই প্রযুক্তির যথার্থ প্রয়োগ কিন্তু বড় সুযোগও হতে পারে৷ এই প্রযুক্তি আমাদের সাংবাদিকদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতে পারে৷ ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানার সুযোগ পেতে পারেন তারা৷ আমাদের ব্যবহারকারীরা এমন সাংবাদিকতার মূল্য দেন৷ যন্ত্র কখনো তা দিতে পারবে না৷ ভালো করে তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে অভিনব খবর দেবার চেষ্টা করতে পারেন তারা৷ সাত দশক ধরে ডিডাব্লিউ যে উচ্চ মান বজায় রেখে চলেছে, সেই ধারা চালু রেখেই এমনটা করতে চাই আমরা৷
মানুয়েলা কাস্পার-ক্লারিজ/এসবি