কিয়েভ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার রাশিয়ার?
৩০ মার্চ ২০২২মঙ্গলবার জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সারজাই কিসলিতসা জানিয়েছেন, রাশিয়া কিয়েভ থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে। বস্তুত, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান বন্ধ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়ার যা ক্ষতি হয়েছে, তা সোভিয়েতের আফগানিস্তানে ক্ষতির সমতূল্য।
রাষ্ট্রদূতের দাবি
রাষ্ট্রদূত সারজাই জানিয়েছেন, ইউক্রেনের লড়াইয়ে রাশিয়ার ১৭ হাজার সেনা নিহত হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের অফিসারের সংখ্যা অনেক। এছাড়াও এক হাজার সাতশ আর্মার্ড ভেহিক্যাল বা সাঁজোয়া গাড়ি, ছয়শ ট্যাঙ্ক, তিনশ আর্টিলারি সিস্টেম, ১২৭টি বিমান, ১২৯টি হেলিকপ্টার, প্রায় একশটি রকেট লঞ্চার সিস্টেম, ৫৪টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং সাতটি যুদ্ধ জাহাজ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি সারজাইয়ের। রাশিয়ার এই ক্ষতিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতের ক্ষতির সঙ্গে তুলনা করেছেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত। সরাসরি জয়ের কথা না বললেও, তার দাবি এই বিপুল ক্ষতির কারণেই ইউক্রেন থেকে ধীরে ধীরে সৈন্য প্রত্যাহার করছে রাশিয়া।
জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্যের এখনো পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি রাশিয়া। ক্ষতির পরিমাণ নিয়েও তারা কোনো তথ্য দেয়নি। বস্তুত, এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও একাধিকবার দাবি করেছেন, লড়াইয়ে ১৫ হাজার রাশিয়ার সেনার মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়া তখন জানিয়েছিল সব মিলিয়ে তাদের ৪৯৭ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
আলোচনায় আশার আলো
তুরস্কে মস্কো এবং কিয়েভের বৈঠক শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। এই প্রথম আলোচনায় খানিকটা হলেও আশার আলো দেখা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কিয়েভ এবং উত্তর ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর চেরনিহিভ থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ দ্রুত শুরু হবে। অর্থাৎ, রাজধানী কিয়েভ এবং উত্তর ইউক্রেনকে আর লড়াইয়ের ময়দান হিসেবে দেখছে না তারা। পূর্ব ইউক্রেন নিয়ে অবশ্য এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। এই ঘোষণার পাশাপাশি জেলেনস্কি সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তার বক্তব্য, এখনই রাশিয়ার প্রতিনিধিদের এই দাবি পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। রাশিয়া যে আবার আক্রমণ চালাবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ইউক্রেন সেনার দাবি
ইউক্রেন সেনার প্রধানও সাংবাদিকদের একই কথা বলেছেন। তার বক্তব্য, এখনই রাশিয়ার এই বক্তব্যকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। যেভাবে কিয়েভ অঞ্চল থেকে রাশিয়ার সেনা পিছোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, তারা শিফট বদল করছে। একদল সেনাকে প্রত্যাহার করে নতুন সেনা সেখানে পাঠানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেনা প্রত্যাহারের নামে পরিশ্রান্ত সেনাদের পরিবর্তন করে রাশিয়া ফের আক্রান্ত শানাতে পারে তার আশঙ্কা। বস্তুত, সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে পরিশ্রান্ত সেনাদের ফিরে যাওয়ার সেফ প্যাসেজ তৈরি করা হলো বলে তার ধারণা।
ফের বৈঠক
মঙ্গলবারের পর বুধবারও তুরস্কে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসবেন। এদিন আরো কিছু বিষয়ে আশার আলো দেখার সম্ভাবনা আছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে ইউক্রেন আগেই জানিয়ে দিয়েছে, এই বৈঠকে তাদের ন্যূনতম এজেন্ডা মানবাধিকার এবং সর্বোচ্চ এজেন্ডা যুদ্ধবিরতি। শান্তিচুক্তির বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
আক্রমণ অব্যাহত
তুরস্কে যখন দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে, তখনো ইউক্রেনের একাধিক শহরে লাগাতার হামলা চালিয়ে গেছে রাশিয়া। ইউক্রেনও পাল্টা জবাব দিয়েছে। মঙ্গলবার মাইকোলেইভে সরকারি ভবনে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রাথমিকভাবে ইউক্রেন জানিয়েছিল, ওই ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। পরে জানানো হয়, ১২ জন নিহত। ২২ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনো কেউ আটকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, বিবিসি)