‘কিউরিওসিটি’
১৩ আগস্ট ২০১২ছয় পা নিয়ে কিউরিওসিটি মঙ্গলে হেঁটে বেড়াবে৷ সেখানকার মাটি আর পরিবেশ নিয়ে করবে গবেষণা৷ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে মঙ্গলে আদৌ প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কীনা৷
পৃথিবী থেকে এই রোভারকে নিয়ন্ত্রণ করবেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷ গবেষণা কাজে সুবিধার জন্য রোভারকে মঙ্গলের ‘গেইল ক্রাটা' এলাকায় নামানো হয়েছে৷ গেইল হচ্ছেন অস্ট্রেলীয় এক বিজ্ঞানী, যিনি উনিশ শতকের শেষের দিকে মঙ্গলে ঐ এলাকার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানিয়েছিলেন৷
গেইল ক্রাটা নির্বাচনের কারণ, এলাকাটি নীচু৷ নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু পানি নীচের দিকে প্রবাহিত হয় তাই সেখানে পানির অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ আর সেটা যদি হয় তাহলে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব জানার যে চেষ্টা বিজ্ঞানীদের সেটা সফল হবে৷
কিউরিওসিটি রোভারটি মঙ্গলে নামার পর বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে৷ প্রথম দিকে সাদাকালো ছবি পাঠালেও পরে রঙিন ছবিও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এমনি একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোভারটি যেখানে অবস্থান করছে সেখান থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের মতো একটা উঁচু স্থান রয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওটা ‘মাউন্ট শার্প'৷ যার উচ্চতা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার৷ এই পাহাড়টি পলি দিয়ে তৈরি৷ এবং এই পলি থেকেই গেইল ক্রাটার জন্ম বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস৷
নাসার এই রোভারটি ঐ পাহাড়ে উঠবে, সেখানকার মাটি পরীক্ষা করে দেখবে৷ এরপরই আসলে বিজ্ঞানীরা তাদের ধারণাগুলো নিশ্চিত হতে পারবেন৷
এমনি আরও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে কিউরিওসিটি৷ প্রাথমিকভাবে গবেষণার সময়কাল দুই বছর ধরা হলেও অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন সময়টা বাড়বে৷
নাসার এই পুরো প্রকল্পে খরচ হচ্ছে আড়াইশো কোটি ডলার৷ স্বভাবতই টাকাটা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷
কিন্তু এরপর কী? কিউরিওসিটি থেকে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে পরবর্তীতে কী করা হবে৷ এ ব্যাপারে নাসার মঙ্গল অভিযানের প্রধান ডাউগ ম্যাককুইশান বলছেন, পরের কাজ হবে গেইল ক্রাটা ছাড়িয়ে মঙ্গলের অন্যান্য অঞ্চলেও রোভার পাঠানো৷ কিন্তু সেজন্য টাকা পাওয়া যাবে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি৷
কেননা কিউরিওসিটির জন্য আড়াইশো কোটি ডলার ছাড়াও হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ' প্রকল্পের পেছনেও প্রচুর অর্থ দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে৷
২০১৮ সালে এটি মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ এর জন্য ব্যয় ধরা হচ্ছে সাড়ে আটশো কোটি ডলারেরও বেশি৷ ইউরোপীয় ও ক্যানাডীয় মহাকাশ সংস্থা এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিলেও নাসাকে যেটা দিতে হবে সেটাও কম নয়৷ ফলে মঙ্গলের জন্য আবারও পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যাবে না, এটাই ধরে নেয়া হচ্ছে৷ তাই আগামী মাসে হোয়াইট হাউজের কাছে নাসা যে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবে তাতে মঙ্গলের জন্য কম খরচের প্রকল্পই প্রস্তাব করা হবে বলে জানা গেছে৷ নাসা সাধারণত এই পরিকল্পনা প্রস্তাবের সময় সেটা বাস্তবায়নে কত খরচ হতে পারে সেটাও জানিয়ে থাকে হোয়াইট হাউজকে৷ সেটার উপর ভিত্তি করে সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী নাসার বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে৷
এখন বাজেট নিয়ে টানাটানি হলেও নাসার পরিকল্পনা ছিল, বা হয়তো এখনো আছে, আগামী ২০৩০ সালের পর কোনো একসময় মঙ্গলে মানুষ পাঠানো৷ এ লক্ষ্যে মঙ্গল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে ২০০৯ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইসা'র সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছিল নাসা৷ কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে পরে সেই চুক্তি থেকে সরে আসে নাসা৷
এদিকে, নাসা সরে যাওয়ায় ইসা এখন রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস'এর সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছে৷ গত এপ্রিলে দুই সংস্থা যৌথভাবে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে তারা মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার কাজ শুরু করবে৷ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি ডলার৷ কিউরিওসিটি প্রকল্পের চেয়ে প্রায় ৯০ কোটি ডলার কম৷ নভেম্বরে ইসা ও রসকসমসের মধ্যে এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে জানা গেছে৷
জেডএইচ/ আরআই (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)