কাশ্মীর হারাতে বসেছে ‘বিশেষ মর্যাদা’
৫ আগস্ট ২০১৯১৯৪৭ সালে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের বদলে স্বাধীন ভারতের অংশ হতে দিতে রাজি হন তৎকালীন কাশ্মীরের রাজা হরিসিং৷ নতুন রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অংশ হলেও ভারতীয় সংবিধানে তার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ‘বিশেষ মর্যাদা'৷ এতদিন পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শীর্ষ ক্ষমতা থাকতো রাজ্য সরকার ও বিধানসভার হাতে৷ সেখানে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের কোনো স্থান ছিল না৷
কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদা স্বাধীনতা পরবর্তী বছরগুলিতে হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতানৈক্যের কারণ৷ বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি জন্মলগ্ন থেকে ছিল এই বিশেষ বিধানের বিপক্ষে৷ উল্টোদিকে কংগ্রেস ও বামপন্থি দলগুলির বেশির ভাগই ছিল কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্ত শাসনের পক্ষে৷
সংবিধান কার্যকর হবার ৬৯ বছর পর সোমবার লোকসভায় একটি প্রস্তাব পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ৷ সেখানে সংবিধানের ৩৭০ ধারার অবসানের দাবি তোলেন তিনি৷ বর্তমান সংসদে ভারতীয় জনতা পার্টির সবচেয়ে বেশি সদস্য থাকার ফলে রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পায় এই বিল৷ একই দিনে তাতে স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' এখন আইনত বাতিল হবার পথে৷
শুধু ‘মর্যাদা'-ছিন্নই নয়, জম্মু ও কাশ্মীর হারাতে চলেছে রাজ্যের মানও৷ পাস হওয়া বিল অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বা ‘ইউনিয়ন টেরিটোরি' করা হবে যথাক্রমে লাদাখ ও জম্মু ও কাশ্মীর নামে৷ উল্লেখ্য, ভারতের আইন অনুযায়ী, রাজ্যের তুলনায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিচালনায় কেন্দ্র সরকারের ক্ষমতা থাকে অনেকটাই বেশি৷
বিভক্ত বিরোধী পক্ষ, সংবাদমাধ্যম
এই বিলটি লোকসভায় পেশ করা হলে তা ‘ভারতীয় সংবিধানকে খুন করার সমান' বলেন রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ৷ অন্যদিকে, বিজেপির জোটসঙ্গী দল পিডিপি'র সদস্য ও জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি একটি টুইটে জানান, ‘‘আমরা যারা গণতন্ত্রে আস্থা রাখতাম, তাদের ঠকানো হয়েছে৷ এতে করে কাশ্মীরের জনতা ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থা আরো বেশি হারাবে৷''
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহ থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হয়তো কেড়ে নেওয়া হবে৷ এর ফলে সেখানে তৈরি হতে পারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, আঁচ করছিলেন সরকারসহ অনেকেই৷ সে-কারণেই, রোববার ৫,০০০ ব্যাটেলিয়ন সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়, জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ পাশাপাশি মুফতিসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন গৃহবন্দি৷
কাশ্মীরকে ঘিরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও বিভক্তি চোখে পড়ছে৷ এক অংশ যদিও এই বদলকে দেখছেন ভারতের বহু প্রতীক্ষিত জয় হিসাবে, আরেক অংশে সরকারের সমালোচনা করছেন মিডিয়ার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব৷ বর্তমানে টুইটার সরগরম কাশ্মীরের খবরেই৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, কাশ্মীরে ছিন্ন রয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা৷ ফলে এখনই মাঠপর্যায়ের খবর পাওয়া দুষ্কর৷
এসএস/এসিবি (এপি, রয়টার্স, পিটিআই)