1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কার্গো ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞায় সংকটে রপ্তানি বাণিজ্য

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৮ জুন ২০১৬

নিরাপত্তার কারণে ঢাকা থেকে বিমানের সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জার্মানি৷ রপ্তানিকারকরা বলছেন, এই ফলে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

https://p.dw.com/p/1JF3a
ছবি: dapd

জার্মানি অনির্দিষ্টকালের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে জানা গেছে৷ তাদের কথায়, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে৷

দিন দুই আগে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর, মঙ্গলবার, ঢাকায় বিমান বন্দরের নিরাপত্তা পরিদর্শনে বাংলাদেশে এসেছে জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি দল৷ এর আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে জার্মানির রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার লুফৎহানসার একটি ফ্লাইটে সরাসরি কার্গো পণ্য যেত জার্মানিতে৷ ঐ ফ্লাইটে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টন কার্গো পণ্য রপ্তানি করতো বাংলাদেশ৷ তবে লুফৎহানসা ছাড়াও অন্য দেশে রি-স্ক্যানিং করে জার্মানিতে মালামাল পরিবহন করে থাকে বড় বড় এয়ারলাইন্স৷ এর মধ্যে এমিরেটস, কাতার, কুয়েত, ইতিহাদ, মালয়েশিয়া, সাউদিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, চায়না ও ওমান এয়ারলাইন্স অন্যতম৷ জার্মানি অবশ্য তৃতীয় দেশে রি-স্ক্যানিং করে পণ্য নেয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি৷

বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় জার্মানিতে, যার ৯৫ ভাগই তৈরি পোশাক৷ এছাড়া বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মানি৷ আর এই পণ্যের একটি বড় অংশই যায় আকাশপথে৷

সিদ্দিকুর রহমান

বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিজিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটি আমাদের জন্য একটি খারাপ খবর৷ ঈদের আগেই আমাদের প্রচুর পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে হবে৷ সাধারণত এই পণ্য বিমানে করেই পাঠানো হয়৷ ফলে শেষ পর্যন্ত এই পণ্য পঠানো যাবে কিনা তা অনিশ্চিত৷ তাছাড়া রি-স্ক্যানিং করে পাঠালে খরচ বেড়ে যাবে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘ব্রেক্সিট-এর কারণে আমরা এরইমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছি৷ পণ্য রপ্তানি করে পাউন্ডে এখন শতকরা ১২ টাকা কম পাচ্ছি আমরা৷ এখন জার্মানির সঙ্গে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আরো নতুন ক্ষতি যোগ হলো৷''

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় গন্তব্য জার্মানি৷ বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জার্মানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের তৈরি পোশাক খাত এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তাই আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছি৷''

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর লুফৎহানসার ফ্লাইটটি নির্ধারিত ৮০ টন পণ্য, যার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক, শাহজালাল বিমোনবন্দরে ফেলে রেখেই দেশে ফিরে গেছে৷

বিজিএমইএ বলছে, তৈরি পোশাক খাতের একটা বড় অংশ জার্মানিতে রপ্তানি করা হয় জিরো ট্যারিফে৷ এর সবটাই যায় আকাশপথে৷ বর্তমানে জরুরিভিত্তিতে গার্মেন্ট পণ্যের নমুনাও সরাসরি আকাশপথে জার্মানিতে পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল৷

সাইফুল ইসলাম

এদিকে লুফৎহানসার মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্গো সরাসরি বহন করা হতো, তা থেকে মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতো বিমান বাংলাদেশ৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা৷

জার্মানি অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কথা বলে বিমানে কার্গো নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ তারা জানিয়েছে, বিমানের কার্গো রপ্তানি টার্মিনালটি বহিরাগত জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে৷ এ সব জনবল নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ৷

অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার পর রেডলাইন নামে একটি নিরাপত্তা সংস্থাকে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে দায়িত্ব দেয়া হয়৷ কিন্তু তাদের কাজ আশানুরূপ নয় বলে জানা গেছে৷ তাই ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যুক্তরাজ্যের রেডলাইন কোম্পানির নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা আশা করি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঢাকায় জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে৷ তাহলে সংকট কেটে যাবে৷''

সিদ্দিকুর রহমানের কথায়, ‘‘আশা করি এই নিষেধাজ্ঞা শীঘ্রই উঠে যাবে৷ আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলছি কার্যকর পক্ষেপ নিতে৷'' তবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

প্রসঙ্গত, এটাই অবশ্য প্রথম নয়, এর আগে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া এবং মার্চ মাসে যুক্তরাজ্য একই ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য