টিভিতে মহিমান্বিত নির্যাতন
১৪ মে ২০১৪লন্ডনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, ‘হোমল্যান্ড' বা ‘টোয়েন্টিফোর'-এর মতো টেলিভিশন অনুষ্ঠান এ সব নির্যাতনের ঘটনাকে প্রকারান্তরে ‘মহিমান্বিত' করছে৷
অ্যামনেস্টি বলছে, তাঁদের কাছে বিশ্বের ১৪১টি দেশের বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার তথ্য রয়েছে, যার মধ্যে নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী ৭৯টি দেশও আছে৷ মোট ১৫৫টি দেশ ১৯৮৪ সালে ওই সনদে স্বাক্ষর করে৷
এ প্রতিবেদন তৈরি করতে ২১টি দেশের ২১ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৪ শতাংশ বলেছেন, কোনো কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে যেতে হলে সেখানে নির্যাতন চালানো হবে তাঁদের আশঙ্কা৷
উত্তরদাতাদের এক তৃতীয়াংশ মনে করেন, তথ্য আদায়ের জন্য কখনো কখনো নির্যাতনের বিকল্প থাকে না৷ এ সব ক্ষেত্রে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য বলেই তাঁরা মনে করেন৷
অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, ‘‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে নির্যাতন এখন একটি মামুলি বিষয়, এ যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে৷''
এ ধরনের নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার লন্ডনে এক সাংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে অ্যামনেস্টির ‘স্টপ টর্চার' কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি৷
সলিল শেঠি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রভাব বলয়ের দেশগুলোতে হেফাজতে নির্যাতন এতটাই বেড়েছে, যেন এটা জাতীয় নিরাপত্তারই অংশ৷''
এর মধ্য দিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি হয়েছে৷ ‘গ্লোবস্ক্যান' জরিপে চীন ও ভারতের ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তথ্য আদায়ের প্রয়োজনে নির্যাতনকে তাঁরা সমর্থন করেন৷ অন্যদিকে গ্রিসে এই হার ১২ শতাংশ, আর্জেন্টিনায় ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৯ শতাংশ৷
যুক্তরাজ্যে অ্যামনেস্টির কান্ট্রি ডিরেক্টর কেট অ্যালেন বলেন, ‘‘হোমল্যান্ড ও টোয়েন্টিফোর-এর মতো টেলিভিশন সিরিয়াল যেভাবে সহিংসতার ঘটনা উপস্থাপন করে তাতে একটি প্রজন্মের কাছে হেফাজতে বা কারাবন্দি অবস্থায় নির্যাতনের বিষয়টি কার্যত ‘মহিমান্বিত' হয়েছে৷ কিন্তু চিত্রনাট্যের নাটকীয়তা এবং বাস্তবের টর্চার চেম্বারে সরকারি লোকের হাতে নির্যাতন এক বিষয় নয়৷''
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার কয়েকটি দেশে পুলিশের নির্যাতন যেন জীবনেরই অংশ৷ আফ্রিকার অন্তত ৩০টি দেশে এ ধরনের নির্যাতনের দায়ে কোনো শাস্তি হয় না৷
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দিদের ওপর নির্যাতন, মধ্যপ্রাচ্যে বিচারের নামে পাথর ছুড়ে হত্যা এবং ইউরোপে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার বিষয়গুলোও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সলিল শেঠি৷
তিনি জানান, ‘স্টপ টর্চার' কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মরক্কো ও পশ্চিম সাহারা, নাইজেরিয়া এবং উজবেকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, কারণ এসব দেশেই নির্যাতনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি৷
সলিল শেঠি বলেন, ‘‘সরকারগুলো তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করছে না৷ আর এ কারণে লাখ লাখ মানুষকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে৷''
জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)