1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাবুলে নিরাপত্তার গ্যারান্টি নেই

২২ মে ২০১৭

‘অপারেশন মার্সি' সাহায্যকারী সংগঠনের উপর হামলার খবর পেয়ে কাবুলে ডয়চে ভেলের দুই সাংবাদিক সান্ড্রা পেটার্সমান ও ব্রিগিটা শ্যুলকে-গিল এই সংকটপূর্ণ এলাকায় কাজের বিপদের একটা চিত্র তুলে ধরেছেন৷

https://p.dw.com/p/2dLWN
কাবুলে হামলা
ছবি: DW

আমরা কাজে ডুবে রয়েছি৷ শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ পড়ছি, শুনছি৷ আমির, নুরি, মুজতবা ও ইসা আমাদের কাবুলে বসবাসের আতঙ্কের কথা শোনাচ্ছে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হবার পর জার্মানি থেকে তাদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ তাদের কথা শুনতে শুনতেই সুইডেনের সাহায্যকারী সংগঠন ‘অপারেশন মার্সি'র উপর হামলার ভয়ংকর খবর কানে এলো৷ শুনে বিহ্বল হয়ে পড়লাম৷ সব হামলাই ভয়ংকর – তা সে কাবুল, প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস, বার্লিন – যেখানেই হোক না কেন৷

এখনো এই হামলা সম্পর্কে সব তথ্য জানা যায়নি৷ কাবুলে পরিচিতদের ফোন করে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফগান সহকর্মীদের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করছি৷

নিজেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কুশল সংবাদ জানালাম৷ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা টেলিফোন, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করছে৷ জার্মানি থেকে বিতাড়িত তরুণরা জার্মান ভাষা যথেষ্ট জানেন, তাঁরা আমাদের টেলিফোন সংলাপ শুনে বুঝতে পারছেন৷ মুজতবা ও ইসা আমাদের কাছে শোক প্রকাশ করলেন৷ আমরা প্রধান সম্পাদক ও নিরাপত্তা সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বিচার করতে লাগলাম৷

হামলার লক্ষ্য ছিল বিদেশিরা

গোটা চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ বিদেশিরাই শনিবারের রাতের হামলার লক্ষ্য ছিল৷ সাহায্যকারী সংগঠনের বসতবাড়িকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল৷ এক আফগান প্রহরী ও এক জার্মান সাহায্যকারী নারী নিহত হয়েছেন৷ ফিনল্যান্ডের এক সাহায্যকারী নারীকে অপহরণ করা হয়েছে৷ কাবুল শহরে বিদেশিদের উপর এটাই প্রথম সুপরিকল্পিত হামলা নয়৷ তবে আফগানিস্তানের নিরীহ মানুষরাই বেশিরভাগ হামলার লক্ষ্য হন৷ চলতি বছরের শুরু থেকে কাবুলে কমপক্ষে ৭টি বড় হামলা ঘটেছে, যার ফলে কয়েকশ' মানুষ হতাহত হয়েছে৷ হয় তালিবান, কিংবা স্বঘোষিত ‘ইসলামিক স্টেট' এই সব হামলার দায় স্বীকার করেছে৷

গত কয়েক দিনে আমরা আফগানিস্তানের রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি দেখেছি৷ বিস্ফোরণ-প্রতিরোধক প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়ার মাধ্যমে শহরটিকে প্রায় দুর্গ করে তোলা হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও কয়েক দিন আগে বিমান অবতরণের সময় সবকিছু বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল৷ গাঢ় নীল আকাশে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে৷ যেসব মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তাদের বেশ খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে৷ তবে সেই শান্তি যে কতটা ভুয়া, তা শুধু এই একটি হামলাই দেখিয়ে দিচ্ছে না৷

কাবুল শহরে নিরাপত্তার কোনো গ্যারান্টি নেই৷ আজ যে এলাকা শান্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে, আগামীকাল তা হামলার লক্ষ্য হতে পারে৷ যাত্রার আগে আমরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে রেখেছি৷ সংকটপূর্ণ এলাকায় কাজের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠানের স্পষ্ট বিধিনিয়ম রয়েছে৷ আমরা সেই নির্দেশ মেনে চলছি এবং নিজেদের বোধশক্তি অনুযায়ী চলছি৷ এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়৷

কাবুলে হামলা
যে বাড়িতে জার্মান নারী ও অফগান প্রহরী নিহত হয়েছিলেন, তার প্রবেশদ্বারের সামনে এক আফগান কিশোর ছবি: Reuters/O.Sobhani

সন্ত্রাস ও হিংসা দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো সহযোগীরা আফগানিস্তানে আবার আরও সৈন্য পাঠানোর যে ইচ্ছা প্রকাশ করছে, যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইছি৷ অনেকে বলছেন, বাকি কোনো পরিবর্তন ছাড়া শুধু সৈন্য পাঠিয়ে কী হবে? কেউ বলছেন, ‘‘আফগানিস্তানের মানুষ হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি৷ তাছাড়া অন্তর্কলহ ভুলে আমাদের সরকারের দেশ শাসন করা উচিত৷'' কারো মতে, আরও বিদেশি সৈন্য এনে কী হবে, যদি তাদের লড়াই করার অনুমতি না থাকে! কেউ বলছেন, অসংখ্য মিলিশিয়া বাহিনীকে নিরস্ত্র করে শুধু সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করা উচিত৷ ন্যাটো বিফল হয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করে৷ তারা জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী দেখতে চাইছে৷ আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে তারা শিক্ষার বদলে সবার আগে নিরাপত্তা চাইছে৷

এত রকমের উত্তর সত্ত্বেও যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তা হলো, কাবুল শহরে কেউ নিরাপদ বোধ করছে না৷ তবে সবাই সেই ঝুঁকি সত্ত্বেও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে৷ একটি বাক্য প্রায়ই আমরা শুনতে পাই – ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বেরোলে সন্ধ্যায় জীবন্ত অবস্থায় ফিরতে পারবো কিনা, তা জানি না৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঁচতে তো হবেই৷''

আমরা আজ এই শহরে বিদেশি অতিথি হিসেবে এই মারাত্মক হামলা সত্ত্বেও গতকালের তুলনায় বাড়তি বিপদের মধ্যে নেই৷ আফগানিস্তানের রাজধানীতে সন্ত্রাস ও হিংসা দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ৷ সেইসঙ্গে রয়েছে অপরাধচক্রগুলির রমরমা৷ অপহরণ ব্যবসার আকার নিয়েছে৷

কাবুলের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরতে আমরা সাংবাদিক হিসেবে এখানে রয়েছি৷ এর আগেও কয়েকবার এখানে এসে কাবুল, তথা আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে৷ আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলছে৷ প্রায় ১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সেনা অভিযানের ফলে দেশের অগ্রগতি হয়েছে, দেশ আরও উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে বটে, কিন্তু শান্তি ও নিরাপত্তা আসেনি৷

পেটার্সমান/শ্যুলকে-গিল/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান