কাবুল ও ইসলামাবাদ: বন্ধু, না শত্রু?
১৬ এপ্রিল ২০১৩উগ্র ইসলামপন্থি তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলাপ-আলোচনার প্রশ্নটাই ধরা যাক৷ গত নভেম্বরেও পরিস্থিতি আশাজনক মনে হয়েছিল৷ কাবুল এবং ইসলামাবাদ, দু'তরফই আপোশের মনোভাব দেখায় ও তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলাপ-আলোচনায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়৷ কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছে, তারা একাই তালেবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাবে৷
এই সেদিন অবধি আফগান পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান ছিল, তালেবানকে আলাপ-আলোচনায় আনার জন্য পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন৷ কিন্তু এ মাসের সূচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জনান মুসাজাই ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলাপ-আলোচনা বানচাল করার প্রচেষ্টার অভিযোগ করেন৷ মুসাজাই বলেন, পাকিস্তান শুধু আফগানিস্তানে তার প্রভাব বজায় রাখতে এবং বিস্তার করতে আগ্রহী৷
ব্লেম গেম
আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতো কাবুলের এই মনোভাবটা ভ্রান্ত৷ জার্মানির ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ ইওখেন হিপলার-এর মতে: ‘‘পাকিস্তানকে ছাড়া আফগানিস্তানে স্থিতি আনা সম্ভব নয়৷ আবার আফগানিস্তানে স্থিতি না এলে পাকিস্তানে স্থিতি আনা সম্ভব নয়৷''
আসল সমস্যা সীমান্তের দু'পারে তালেবানের প্রতি কি ধরনের নীতি অবলম্বন করা উচিত, বা করা যেতে পারে, তাই নিয়ে৷ পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান আফগান তালেবানের সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করার অবাধ সুযোগ দেয়৷ প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তান সীমান্তের অপর পার থেকে রকেট ছোঁড়ে, দৃশ্যত তালেবানদের রোখার জন্য৷ আফগানিস্তানের অভিযোগ, পাকিস্তান তার রাজ্যাঞ্চলে আফগান তালেবানদের নিরাপদে বাড়তে দেয়; পাকিস্তানের গুপ্তচর বিভাগ আফগানিস্তানের স্থিতির হানি ঘটনার জন্য আফগান তালেবানকে সাহায্য করেছে, ইত্যাদি৷
বৈরীতার ইতিহাস
১৮৯৩ সাল যাবৎ দু'টি দেশের দেশের মধ্যে একটি আড়াই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে বটে, কিন্তু সেটি কোনো স্বীকৃত সীমান্ত নয়, একটি চুক্তিকৃত ডিমার্কেশন লাইন, যার নাম ডুব়্যান্ড লাইন৷ সেই লাইনের ফলে পশতুনদের উপজাতিক এলাকা বিভক্ত হয়, আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল বাদ পড়ে৷ সেই আমল থেকেই দু'দেশের সম্পর্কে একটি গভীর অনাস্থা বিরাজ করছে৷
নব্বইয়ের দশকে যে তিনটি দেশ আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তারা ছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান৷ নাইন-ইলেভেনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পাকিস্তান তালেবানের থেকে কিছুটা দূরে সরে যায় বটে, কিন্তু আফগান তালেবানের মূল সংগঠন কোয়েটা-শুরা পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে অবস্থিত৷
ইটার্নাল ট্রায়াঙ্গেল
২০১৪ সালে বিদেশি সৈন্যরা আফগানিস্তান পরিত্যাগ করার পর তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলাপ-আলোচনায় পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করে কাবুল৷ কিন্তু পাকিস্তানের দাবি একটি রণকৌশলগত চুক্তি যার উপজীব্য হবে: ভবিষ্যতে ভারতের আফগানিস্তানে কোনো প্রভাব থাকবে না; এছাড়া আফগান সেনাবাহিনী ভারতে প্রশিক্ষণ না নিয়ে পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নেবে৷ ওদিকে ভারত ও আফগানিস্তান ২০১১ সালেই একটি ‘‘রণকৌশলগত চুক্তি'' স্বাক্ষর করেছে৷
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে একমত যে, যতদিন পর্যন্ত না ভারত ও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে তাদের প্রতিযোগিতার অন্ত ঘটায়, ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তান আফগান তালেবানকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করবে এবং আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটাবে৷