‘কাপড়চোপড় খুলে আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়’
১৮ অক্টোবর ২০২০দুই বছর আগে ওমান থেকে বসনিয়া এসেছেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইয়াসিন৷ স্বপ্ন ইউরোপের কোন দেশে পাড়ি জমানো৷ তিনি এখন আটকে আছেন ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তের ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে৷ সেখান থেকে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি ইয়াসিন৷ বারবার দেশটির পুলিশের হাতে আটকা পড়েন৷ পুলিশ তার সর্বস্ব রেখে আবারো বসনিয়া ফেরত পাঠায় বলে জানান তিনি৷
‘‘ওমান থেকে স্পিড বোটে করে ইরান এসে সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসি আমি৷ গ্রিস থেকে আসি বসনিয়াতে৷ গত চার মাস যাবৎ এ জঙ্গলটিতে আছি৷ সর্বশেষ গত তিনদিন আগে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি৷ সে সময় কিছুটা (ক্রোয়েশিয়ার) ভিতরে ঢুকেছিলাম৷ কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই৷ পুলিশ আমার সবকিছু কেড়ে নেয়৷ শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়,'' কষ্টের কথা এভাবেই ডয়চে ভেলেকে বলেন ইয়াসিন৷
বসনিয়ার জঙ্গলে বাংলাদেশিদের আটকে পড়ার বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদনের জন্য বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন ডয়চে ভেলের দুই সংবাদকর্মী৷ তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশটির ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী ভেলিকা ক্লাদুসা এলাকার একটি পাহাড়ের ঢালে প্রায় কয়েকশ' বাংলাদেশি অবস্থান করছেন৷ তীব্র শীত, খাবারের অভাব, পানির সংকটে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা৷
লাখ টাকা খরচ আর বিপদসংকুল পথ
ভেলিকা ক্লাদুসায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছেন৷ পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ৷ সেখানে অবস্থানরতরা জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা খরচ করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন৷ ‘‘১৮ থেকে ২০ লাখ খরচ করে এখানে এসেছি৷ বিভিন্ন দেশে দালালদেরকে এ টাকা দিতে হয়েছে আমাদের৷ এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাব আমরা,'' জানালেন সেখানে অবস্থানরতদের একজন৷
মানবেতর জীবন
গাছের সাথে পলিথিন বেঁধে ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে তাঁবু যেখানে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন তারা৷ এমন বেশ কিছু তাঁবুতে অবস্থান কয়েকশো বাংলাদেশির৷ কর্দমাক্ত মাটিতে পাতলা পলিথিন বিছিয়ে নিজেদের থাকার আয়োজন করেছেন তারা৷ নেই পর্যাপ্ত খাবার কিংবা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা৷ ভেলিকা ক্লাদুসায় একটি শরণার্থী ক্যাম্প থাকলেও সেখানে সবাইকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে নাবলে অভিযোগ করেছেন তারা৷ অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যক্ত কারখানায়৷
‘নজর নেই' আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর
কয়েকশো মানুষ বসনিয়ার এ জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সহায়তায় তৎপর হতে দেখা যায়নি৷ এখানে অবস্থানরত বাংলাদশিরা জানান, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কেউ কেউ কিছু খাবার আর চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়৷
আরআর/এফএস