1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাদের মির্জার জয়েও ‘ডিজিটাল তেলেসমাতির' অভিযোগ

১৮ জানুয়ারি ২০২১

বিএনপির প্রার্থীরা অনেক জায়গায় ‘অবিশ্বাস্য কম' ভোট পাওয়ায় পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ‘ডিজিটাল তেলেসমাতি'র অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ৷ তাদের অভিযোগ, এবার ইভিএম-এর কারসাজি হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3o5MO
Bangladesch Elektronische Wahlmaschine
প্রতীকী ছবিছবি: bdnews24.com

কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘‘ইভিএম-এ কারসাজির কোনো সুযোগ নেই৷''

৬০ পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ৪৬, বিএনপি ৪ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্যরা ৯টিতে জয়ী হয়েছেন৷ একটির ফল স্থগিত আছে৷ ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৯২ ভাগ৷ সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৮৫ দশমিক ৪ ভাগ৷ আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে সাভারে, ৩৩ দশমিক ৫৯ ভাগ৷

কিন্তু নির্বাচনেবিএনপি ও জামায়তের যেসব ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী' হেরেছেন, তারা অনেক কম ভোট পেয়েছেন. যা তাদের সম্ভাব্য ভোট ব্যাংকের হিসাবের সাথে মেলানো যাচ্ছে না৷ ১৪টি পৌর সভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা কাস্টিং ভোটের ৮০ থেকে ৯৫ ভাগ ভোট পেয়েছেন৷ আর বিএনপি পেয়েছে ১৮ ভাগ ভোট৷ ৮টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে৷

কাদের মির্জার জয়েও ভোট জালিয়াতি?

এবার সবচেয়ে আলোচিত ছিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা ‘সত্যবচনে' শুরু দেকেই দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেন৷ তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন৷ আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বিপূল ভোটে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন৷ এই পৌর এলাকায় মোট ভোট  ২১ হাজারের কিছু বেশি৷ ৬৬ ভাগ ভোট পড়েছে৷ কাদের মির্জা পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫১ ভোট৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট৷ বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘‘নির্বাচনে কোনো চাপ ছিল না আমার ওপর৷ কেউ আমাদের পোস্টারও ছেঁড়েনি৷ পরিবেশ ভালো ছিল৷ ভোটারদের উপস্থিতিও ভালো ছিল৷ কাউকে ভোট কেন্দ্রে বাধাও দেয়া হয়নি৷ কিন্তু এত কম ভোট পেয়ে, আমি কেন সবাই বিস্মিত হয়েছেন৷ এখানে ইভিএম জালিয়াতি হয়েছে৷ ইভিএমই ভোটের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এটা নতুন ধারার জালিয়াতি মনে হয়েছে আমরা কাছে৷ আমার হিসাব ছিল ৫০০-৬০০ ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে৷ সব দলেরই তো একটি ভোট ব্যাংক আছে৷ সেই ভোট গেল কোথায়?''

তবে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘‘এখানে কোনো জালিয়াতি হয়নি৷ আর ইভিএম-এ জালিয়াতির সুযোগই নেই৷ সর্বোচ্চ শতকরা এক ভাগ ভোট ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া দেয়া যায়৷ তবে যদি নির্বাচন কর্মকর্তারা সততার সাথে কাজ না করেন তাহলে অন্যরকম কিছু হতে পারে৷''

তবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরও এরকম অস্বাভাবিক কম ভোট পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ হবিগঞ্জের মাধবপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাসগুপ্ত ভোট পেয়েছেন মাত্র ৬০৮টি৷ মোট ভোট পড়েছে ১৩ হাজার ১০৫টি৷ তিনি জামানত হারিয়েছেন৷

এদিকে ভোটারের উপস্থিতি গত ২৮ ডিসেম্বরের প্রথম ধাপের নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি দেখা গেলেও বাস্তবে এবার ভোট পড়েছে কম৷ প্রথম ধাপে মোট ২৪টি পৌরসভায় ভোট পড়েছিল ৬৫ ভাগ৷ আর এবার ৬২ ভাগের কিছু কম৷ প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ ১৮, স্বতন্ত্র ৩ এবং বিএনপি ২টি পৌরসভায় মেয়র পদে জয়ী হয়৷ একটি'র নির্বাচন স্থগিত হয়৷

‘‘এবার ডিজিটাল তেলেসমাতির নির্বাচন হয়েছে’’: বদিউল আলম মজুমদার

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার অভিযোগ করেন, ‘‘এবার ডিজিটাল তেলেসমাতির নির্বাচন হয়েছে৷ এবার ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিল৷ কিন্তু  প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটারের আকাল ছিল৷ কিন্তু তারপরও এবার ভোট পড়েছে কম৷ আমার তো হিসাব মেলে না৷ ৩০টি পৌরসভায় বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য না৷ বিএনপি মাত্র ১৮ ভাগ ভোট পেয়েছে৷ আর ভোটের বিপুল ব্যবধান আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে যায় না৷''

তিনি দাবি করেন, ‘‘এখানে ডিজিটাল  তেলেসমাতি আছে৷ নির্বাচন কমিশন তো এর আগে জাতীয় নির্বাচনেও তেলেসমাতি দেখিয়েছে৷ এবার নতুন তেলেসমাতি৷ ইভিএম তো পুরো নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে৷ তারা যেরকম ফল চাইবে, সেরকম হবে৷ এর বিপরীতে তো প্রিন্টেড ব্যালট পেপার নেই৷ ফলে আর কিছুই করার নেই৷ দুনিয়ার কোথাও এরকম ইভিএম নেই৷''

‘‘যে যেরকম ভোট পেয়েছেন ফলও তাই হয়েছে’’: রফিকুল ইসলাম

কিন্তু নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ভোটের ব্যাপক পার্থক্য হলে আমরা কী করবো? যে যেরকম ভোট পেয়েছেন ফলও তা-ই হয়েছে৷''  ইভিএম জালিয়াতির প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘তাহলে বিএনপির প্রার্থী, বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কীভাবে পাস করল?''

ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকার পরও ভোট পড়ার হার প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচনের চেয়ে কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সাভারসহ কিছু পৌরসভায় পোশাক কারাখানার কারণে ফ্লোটিং ভোটার অনেক৷ তারা করোনায় যার যার বাড়িতে চলে গেছেন৷ ভোটের গড় হার কমাতে ওই ধরনের পৌরসভাগুলো ভূমিকা রেখেছে৷ ওই রকম পৌরসভা বাদ দিয়ে গড় করলে ভোটের হার অনেক বেশি হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা কঠোর ছিলাম৷ আর নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ভোটে আমরা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি৷ ইভিএম আমাদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই৷''