কাঁটাতারে নিয়ন্ত্রিত দুই বাংলার আবেগ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নানা উদযাপন হয় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র৷ সরকারি এবং বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে পালিত হয় দিনটি৷ বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালিদের অকৃত্রিম আবেগ জানান দেয় গানে, কবিতায়৷ তার মধ্যে সবথেকে আন্তরিক অনুষ্ঠানটি সম্ভবত হয় সীমান্ত অঞ্চলের বনগাঁয়৷ আগের দিন বিকেল থেকে একাধিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ঘটতে থাকে এক অভিনব বিনিময়৷ বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ, মূলত সাংস্কৃতিক কর্মীরা সীমান্ত পেরিয়ে আসেন বনগাঁয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে৷ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই৷ একইভাবে বনগাঁর বহু মানুষ যান বাংলাদেশে, ভাষাশহিদদের স্মরণে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে৷ বহু বছর ধরে জারি থাকা সেই যোগাযোগে এবার কিছুটা ছন্দপতন৷ ভারতে চলছে নাগরিকপঞ্জিবিরোধী আন্দোলন৷ এই পরিস্থিতিতে এবার জারি হয়েছিল নতুন ফরমান, গুনেগেঁথে মাত্র ৫০ জন ‘অতিথি’ বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসতে পারবেন৷ তেমনই ভারত থেকে ৫০ জনই এবার যেতে পারবেন বাংলাদেশে৷ ফলে বনগাঁ অঞ্চলের মানুষজন, যাঁরা সারা বছর মুখিয়ে থাকতেন এই দিনটির স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অবসরটির জন্য, তাঁরা এবার হতাশ৷
গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বনগাঁর বিশিষ্ট কবি এবং সংস্কৃতি কর্মী দীপশিখা ঘোষ৷ তিনি জানালেন, এবারের এই পরিস্থিতি তাঁদের জন্যে অত্যন্ত বেদনার৷ কারণ, এতদিন তাঁদের মনে হতো, আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ যেমন কাঁটাতারের বেড়ায় বাধা পায় না, উড়ে বেড়ানো পাখি যেমন সীমান্ত মানে না, তাঁরাও তেমনি বছরের এই একটি দিন অবাধে নিজের দেশে যেতে পারেন৷ বাংলাদেশকেও তাঁরা নিজের দেশ বলেই মনে করেন৷ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারকে নিজেদের ঘরেরই ছেলে মনে করে বনগাঁবাসী৷ দীপশিখা ঘোষও জোর গলায় বলেছেন, ‘‘আমরা কাঁটাতার মানি না!’’ বিপর্যস্ত এই আবহে একমাত্র আশার কথা সম্ভবত সেটাই৷ যে সরকারি বিধিনিষেধ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগকে এখনো দমিয়ে রাখতে পারে না৷