কসমেটিক্স-এ জীব-জন্তু নিষিদ্ধ
১৮ জুলাই ২০১৩সম্প্রতি কসমেটিক্স সংক্রান্ত নতুন এক আইন কার্যকর হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে, যা পশু অধিকারবাদীদের কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করবে৷ ১১ জুলাই থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-তে নতুন এই আইনটি চালু হলো৷ ‘‘এটি একটি মাইলফলক৷ কিন্তু এই আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ রয়েছে অসংখ্য ফাঁক ফোকড়ও৷'' বলেন জীববিজ্ঞানী ও ডক্টর্স এগেনস্ট অ্যানিমেল এক্সপেরিমেন্টস-এর মুখপাত্র সিলকে বিটৎস৷
এই নতুন আইন, মার্চ মাস থেকে চলা কসমেটিক্স সংক্রান্ত বিধিবিধানকে আর একটু জোরালো করলো৷ নতুন এই আইনে পশুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে পণ্য তৈরি করা হয়, তা বাজারজাত করাও চলবে না৷ এর ফলে উত্পাদকরা অন্য কোথাও গিয়েও এই পরীক্ষা চালাতে পারবেননা৷
এই আইন যথেষ্ট নয়
পশু অধিকারবাদী বিটৎস অবশ্য মনে করেন, পশু নির্যাতন প্রতিরোধে এই আইন যথেষ্ট নয়৷ কেননা যে সব উত্পাদক কসমেটিক্স সামগ্রী রপ্তানি করতে চান তাঁদের জন্য বিশেষ অনুমোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই আইনে৷ এমনকি অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও জীবজন্তুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হয় তাঁদের ৷
বিটৎস-এর ভাষায়, ‘‘যেমন কোনো কসমেটিক্স প্রতিষ্ঠান যদি চীনে পণ্য রপ্তানি করতে চায়, তাহলে তাকে প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালাতেই হয়৷ কারণ এমনটিই চায় চীনের কর্তৃপক্ষ৷''
আর একটি সমালোচনার বিষয় হলো, ডিটারজেন্ট বা সাবান জাতীয় জিনিসের বেলায় এই আইন প্রযোজ্য হবে না৷ বরং উল্টোটাই৷ এই ধরনের সামগ্রী প্রস্তুত করতে জীবজন্তুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোটা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়৷ এটা দুঃখজনক বলে মনে করেন জার্মান পশু রক্ষা সমিতির মুখপাত্র ইর্মেলা রুডেল৷ তাঁর কথায়, ‘‘কসমেটিক্স শিল্পকারখানাগুলি পরে এই উপকরণগুলি তাদের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে না৷''
ডিটারজেন্ট উত্পাদকরাও খুশি নয়
অন্যদিকে ডিটারজেন্ট উত্পাদকরাও খুব খুশি নয় এই পরিস্থিতিতে৷ উৎপাদনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিকল্প পদ্ধতির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের৷ পশুঅধিকারবাদী বিটৎস এই প্রসঙ্গে সতর্ক করে বলেন, ‘‘প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করা কসমেটিক্স-এর উপকরণ মানুষের জন্য এক অজানা ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে৷ মানব দেহে এই সবের প্রতিক্রিয়া অন্যরকমও হতে পারে৷''
কোনো কোনো বিকল্প পদ্ধতি মানুষের জন্য বেশ উপযোগী৷ বিকল্প পদ্ধতির মূল্যায়ন ও নিবন্ধন কেন্দ্রের মিশাইল ও্যলগেশ্ল্যাগার বলেন, ‘‘বিকল্প এক পদ্ধতিতে মানুষের ত্বকের সেল ব্যবহার করে গবেষণাগারে ত্বকের মডেল তৈরি করা হয়৷ এই মডেলের ওপর পরীক্ষা করে বোঝা যায়, চামড়ার ওপর উৎপাদন দ্রব্যগুলির ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হয় কিনা৷''
কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য এই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব নয়৷ কেননা এতে প্রয়োজন পড়ে ভ্রুণের স্টেম সেল৷ যে পদ্ধতির প্রয়োগ জার্মানিতে নৈতিক দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত সম্ভব নয়৷ সেক্ষেত্রে গবেষকরা ইঁদুরের সেল ব্যবহার করেন৷ তবে বয়স্কদের স্টেম সেল ব্যবহার করেও এই কাজটি করা যায়৷
বয়স্কদের সেল থেকে স্টেমসেল
ও্যলগেশ্ল্যাগার জানান, ‘‘কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে বয়স্কদের সেল থেকেও স্টেমসেল তৈরি করা হচ্ছে, যা অনেকটা ভ্রুণ-সেলের মতোই৷ এই কোষ সহজেই তৈরি করা যায়৷ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজেও লাগানো হচ্ছে এই পদ্ধতি৷''
প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে গবেষণার কাজে (১২ মিলিয়ন) ১ কোটি ২০ লক্ষের মতো পশু পাখি ব্যবহার করা হয়৷ তবে কসমেটিক্স সামগ্রীর গবেষণায় এই সংখ্যাটা খুব কম৷ মাত্র ২০০০ অর্থাৎ ০.০২ শতাংশ৷
এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত এই আইন
ডক্টর্স এগেনস্ট অ্যানিমেল এক্সপেরিমেন্টস-এর মুখপাত্র বিটৎস বলেন, ‘‘বিশেষ করে রাজনীতির তরফ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত এই আইন৷ যদিও তা বিশাল আধারে এক ফোঁটা বারির মতো৷ সবে তো যাত্রা শুরু হলো৷''
কসমেটিক্স শিল্প-কারখানাগুলি নতুন নতুন বিকল্প পদ্ধতি তৈরির ক্ষেত্রে চালিকা শক্তি হতে পারে, মনে করেন পশু রক্ষা সমিতির ইর্মেলা রুডেল৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সব পদ্ধতি রাসায়নিক দ্রব্য, ওষুধপত্র ইত্যাদি উত্পাদনের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যাবে৷ এতে করে অন্যান্য ক্ষেত্রেও পশুর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেকটা কমে আসবে৷''