কল্পনা চাকমার পথেই তনু?
১৩ জুন ২০১৬দু'টি ক্ষেত্রেই চলছে তদন্ত আর তদন্ত৷ এই প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেনা এলাকা বা সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনা হলেই তদন্তের নামে ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার প্রবণতা স্পষ্ট৷''
গত ২০ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু৷ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সারাদেশ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠলেও এখন পর্যন্ত কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি৷ এমনকি তনুর মৃত্যুর কারণও জানা যায়নি৷
গত ৪ এপ্রিল প্রথম দফা ময়নাতদন্তের প্রতিতেদন দেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা৷ তাতে বলা হয়, তনুকে হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা ধর্ষণ করেছে এমন কোনো আলামত ময়নাতদন্তে পাওয়া যায়নি৷ এমনকি মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি বলেও জানানো হয় সেখানে৷
মৃত্যুর ১০ দিন পর তনুর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়৷ ১২ জুন দেয়া হলো রিপোর্ট৷ সেখানেও একই ফল৷ মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি৷ তবে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
আগে ১৬ই মে ডিএনএ প্রতিবেদনে তনুকে ধর্ষণের কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তে যৌন সম্পর্কের আলামতের কথা বলা হয়েছে, ধর্ষণ নয়৷ তনুর পরিবার এরই মধ্যে এই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে৷ মেডিক্যাল বোর্ড বলছে পুলিশের অধিকতর তদন্ত ছাড়া এখন আর মৃত্যুর কারণ জানার উপায় নেই৷
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অপহৃত হন পার্বত্য চট্টগ্রামের হিল উইমেন ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা৷ তিনি ছিলেন পাহাড়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর৷
কল্পনাকে অপহরণ করা হয় রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে৷ অপহরণের পরের দিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন৷
১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩৫ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে৷ ৯৪ জনের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ কল্পনা চাকমার খোঁজ মেলেনি৷
গত বছরের জুনে আদালতে দেয়া সর্বশেষ পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘মামলার ঘটনাটি যেহেতু দেড় যুগ আগের, ১৮ বছরে ভিক্টিমের চেহারার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে৷ যেহেতু এই মামলার মূল সাক্ষী ভিকটিম কল্পনা নিজেই, তাই কল্পনা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত, কিংবা তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে মামলার ভিক্টিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে৷''
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাবেক প্রধান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তদন্তের নামে তনু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আরো অস্পষ্ট করে ফেলা হচ্ছে৷ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও তনুর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি৷ আর আগে ধর্ষণের কথা বলা হলেও এখন বলা হচ্ছে যৌনক্রিয়ার আলামত পাওয়া গেছে৷ দেখে-শুনে মনে হচ্ছে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে৷ আমরা এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে আর আশাবাদী হতে পরছি না৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাটিও এভাবে তদন্তের নামে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে৷ আর সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার তার প্রতিবেদনে যা বলেছেন তা হাস্যকর৷ তিনি বলেছেন ভিক্টিম (কল্পনা চাকমা) নিজেই এই মামলার প্রধান সাক্ষী৷ তাই সে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ করা যাবেনা৷'' সুলতানা কামাল জানতে চান, ‘‘তাহলে তাকে কি নিজে থেকেই উদ্ধার হতে হবে?''
সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি সেনা এলকায় বা সেনাসংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধ ঘটলে তা নিয়ে তদন্ত হয় না৷ আর হলেও তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা করে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ এটা দুঃখজনক৷''
আপনি কি মনে করেন তনু হত্যা রহস্যের উদ্ঘাটন খুব তাড়াতাড়ি হতে পারে? লিখুন নীচের ঘরে৷