উত্তরের সুর
২২ নভেম্বর ২০১২মাত্র ১০ দিনেই কলকাতায় অনেক নতুন বন্ধু করে ফেলেছেন তিনি৷ বাংলাদেশের নবীনা চলচ্চিত্রকার শাহনওয়াজ কাকলি৷ আর তাঁর ছবি উত্তরের সুর এতটাই সাড়া ফেলেছে যে, একবার দেখানোর পর উৎসাহীদের আবদারে দ্বিতীয়বার দেখানো হয়েছে ছবিটি৷ কাকলি নিজেই বলেন, বাঙালি চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তাঁর প্রথম প্রেরণা ঋত্বিক ঘটক৷ কোমল গান্ধার, তিতাস একটি নদীর নাম, বা মেঘে ঢাকা তারা বার বার দেখেন কাকলি৷ তবে নিজের ছবির বিষয় হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভাওয়াইয়া গানের এক শিল্পীর জীবন৷
কাকলি বলছিলেন, ‘‘আগে ভাওয়াইয়া গানের চর্চা হত দিনের বেলা ক্ষেতে কাজ শেষ করে, বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে, অবসর সময়ে৷ ফসল তোলার সময় গান বাঁধা হতো, সুন্দর বৃষ্টি পড়লে গান বানানো হতো, শীতের সময়, অঘ্রাণ মাসে....এখন যেমন মরশুমি গান, কেবল ফসল কাটার সময়, তখন তো তেমন ছিল না৷''
কিন্তু নাগরিক সমাজে প্রায় ভুলতে বসা ভাওয়াইয়া গান কী করে হয়ে উঠল তাঁর ছবির বিষয়৷ উত্তর দিতে গিয়ে কাকলি ফিরে গেলেন তাঁর ছোটবেলায়৷ জানালেন, তিনি শহরের মানুষ৷ একেবারে ভরা শহরে বড় হয়েছেন৷ এমনকি সাঁতার কাটতেও পারেন না৷ কিন্তু ছোটবেলায় মামার সঙ্গে চুরি করে গ্রাম দেখতে যেতেন৷ ছোটমামার মোটর সাইকেলের পিছনে চড়ে৷ তখন গ্রামে গিয়ে দেখতেন, শুনতেন, কত দূর দূর থেকে ভেসে আসছে ভাওয়াইয়া গানের সুর৷ ওই সুর তাঁকে ভাবিয়েছে সেই ছোট থেকেই৷ আজও ঢাকা শহরে বসে কাকলি ভাওয়াইয়া সুরের মধ্যে গ্রামজীবনের গন্ধ পান, ফসলের গন্ধ পান৷ তার থেকেই কাকলির মনে হয়েছিল, ভাওয়াইয়া গান নিয়ে তাঁর কিছু করা উচিত৷
আর ঋত্বিক ঘটক কীভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করলেন জীবনে? কবে থেকে? সেও সেই শৈশবেই, জানালেন কাকলি৷ ছোট থাকতে ঈদের দিন বা পয়লা বৈশাখের দিন ছবি আঁকার অভ্যাস ছিল কাকলির৷ আর ছিল টিভিতে সিনেমা দেখার অভ্যাস৷ অন্য ধারার ছবি, যেগুলোকে বলা হয় আর্ট ফিল্ম, ছোট থেকেই সেগুলো কাকলিকে টানত৷ ফলে বড় হওয়ার পর চলচ্চিত্রের মোহে আবিষ্ট হতে বেশি সময় লাগেনি৷ ঢাকায় যখন চলচ্চিত্র উৎসব হতো, হস্টেল থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে সারা দিন ছবি দেখে যেতেন ক্লান্তিহীন৷ সেই ছবি দেখতে দেখতেই ছবি করতে শেখার শুরু৷
তা হলে কী হবেন ঠিক করেছেন? চিত্রকর, না চলচ্চিত্রকার? হাসলেন কাকলি৷ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া প্রশংসা, ভালোবাসা তাঁকে চলচ্চিত্রের আঙিনা ছেড়ে বেশিদূর যে যেতে দেবে না, সেটা তিনি এখনই বুঝছেন৷ তবে পাশাপাশি ছবি আঁকাও অবশ্যই থাকবে, প্রথম প্রেমের মতো৷