1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় আবার ব্রিজ ধসের কারণ কী?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কলকাতায় মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণ যতদিন না জানা যাচ্ছে, জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো রেলের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ কিন্তু ব্রিজটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছিল কি?

https://p.dw.com/p/34TnH
ছবি: Getty Images/AFP

কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী মূল সড়কপথের অংশ মাঝেরহাট ব্রিজ৷ তার একটা অংশ হঠাৎ কেন ভেঙে পড়ল, তার তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ৷ ব্রিজটি ভেঙে পড়ার পরই স্থানীয় মানুষজন সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, পাশেই মেট্রো রেলের যে উড়ালপথের কাজ চলছে, তার মাটি খোঁড়ার সময় লাগাতার বৈদ্যুতিক ড্রিল ব্যবহার হচ্ছিল বলে, জোরালো কম্পনে মাঝেরহাট ব্রিজের ভিত নড়ে গিয়েছিল৷ পুলিশ এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবেন৷ কিন্তু সেই তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওই অঞ্চলে মেট্রোর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি চিহ্নিত হয়েছে কলকাতা শহরের পুরনো ২০ টি ব্রিজ৷ সেগুলোর মেরামতির কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পূর্ত ও সড়ক দপ্তরকে৷ এছাড়া ভারী পণ্যবাহী ট্রাক, বড় আকারের, ১০ বা তার বেশি চাকার ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে৷

Indien Kalkutta Brückeneinsturz
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

বাস্তুকাররা যদিও বলছেন, নিয়মিত এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হলে কংক্রিটের ব্রিজ ৩০০ বছর অবধি টিকে যেতে পারে৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্থপতি শৈবাল করের সঙ্গে৷ তিনি বলছেন, ‘‘যে কোনো জিনিসেরই, যে গঠনগত অংশগুলো থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর একটা ক্ষয় হয়৷ মানবদেহের মতোই৷ যেটা ভেঙে পড়েছে, সেটা কংক্রিট ব্রিজ ছিল৷ আর আমাদের হাওড়ার ব্রিজ, ওটা ইস্পাতের তৈরি৷ এগুলোর একটা ধারাবাহিক রক্ষণাবেক্ষণ দরকার হয়৷ ব্রিজ যত পুরনো হবে, তার রক্ষণাবেক্ষণ তত ঘনঘন করতে হবে৷ এটা একটা সাধারণ ধারণা৷ আর সব জিনিসেরই ব্যবহারের একটা মেয়াদ থাকে৷ এই ব্রিজটার নকশা ১৯৬৫ সালে করা হয়েছিল৷ হয়ত আরো আগে, ’৬২ সালে৷ তখন তার যা যা বিবেচ্য বিষয় ছিল, যেমন ভারবহনের ক্ষমতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব বদলে গেছে৷ তখন ট্রাকের যে মাপ ছিল, (‌এক একটা ট্রাকে)‌ কতটা মাল বহন করা যাবে, তার যে ছাড়পত্র ছিল, এখন সব বদলে গেছে৷ পরের এই ব্যাপারগুলো কেউ ভাবে না৷’’

কিন্তু এগুলো কি ভবিষ্যতে শোধরানো যায়?‌ ডয়চে ভেলের প্রশ্নের জবাবে শৈবাল কর বলছেন, ‘‌‘‌শোধরানো যায়৷ যদি ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয়, তাহলে আমাদের ধরা হয়, একটা কংক্রিট ব্রিজ ৩০০ বছরও থাকতে পারে৷ কিন্তু সবটাই রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার৷’’

‘ব্রিজ যত পুরনো হবে, তার রক্ষণাবেক্ষণ তত ঘনঘন করতে হবে’

একেবারে কারিগরি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শৈবাল জানাচ্ছেন, কংক্রিটের ব্রিজে যদি ফুটোফাটা দিয়ে জল ঢুকে পড়ে, তাহলে ব্রিজ খারাপ হয়৷ সেটা শুরু হয় ওপরের পিচের আস্তরণ থেকে৷ নতুন আস্তরণ দেওয়ার সময় পুরনোটা তোলা হয় না৷ ফলে ব্রিজের ওপরের অংশের ওজন বেড়ে যায়৷ বা ওপরের অংশটা ঠিকভাবে সারাই না হলে জল ঢুকতে থাকে৷ সেই জল ব্রিজের মূল কাঠামোকে ক্ষইয়ে দিতে থাকে৷ এটা ব্রিজের ক্ষতি হওয়ার একটা কারণ৷ আরেকটা হয় ব্রিজের ভিত নষ্ট হওয়ার কারণে৷ মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে যেমন অনেকেই বলছেন, পাশে মেট্রো রেলের কাজ হওয়ার জন্য ব্রিজের ভিত নড়ে গিয়েছিল৷ যদিও মনুষ্যোচিত ভুলই যে কারণ, সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না৷ আবার হতেও পারে৷ তবে একটা ব্রিজ কেন ভেঙে পড়ল, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল৷ তবে নকশার ত্রুটি যে নয়, এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সেটা জোর দিয়ে বলা যায়৷ কারণ, তেমন হলে ব্রিজটা এতদিন দাঁড়িয়েই থাকত না৷ বরং একজন স্থপতি হিসেবে শৈবালের মনে হচ্ছে, ‘‌স্ট্রাকচারাল ফ্যাটিগ’ একটা সম্ভাব্য কারণ৷ কোনো নির্মাণ দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, ভার বহন করতে করতে একসময় যে ক্লান্তি বা অবসাদের শিকার হয়৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে রাজ্য পূর্ত দপ্তর প্রাথমিকভাবে এরকমই ২০টি সেতুপথ চিহ্নিত করেছে, যেগুলি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করা হবে৷ তার জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হবে, যাঁরা সেতুগুলি খুঁটিয়ে দেখে রায় দেবেন৷ আর মাঝেরহাট ব্রিজ কেন ভেঙে পড়ল, তা খুঁজে বের করে সরকারকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ৭ দিন সময় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তার পরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, ব্রিজটির ভেঙে পড়া অংশ মেরামত করা হবে, না পুরোটাই ভেঙে ফেলে নতুন করে গড়া হবে৷ তবে কেন ব্রিজ ভাঙল, না জানা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ওই এলাকায় মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ৷