করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে যে কারণে উদ্বেগ
২৭ নভেম্বর ২০২১সাউথ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছিল৷ শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ধরনটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন' বা উদ্বেগজনক হিসেবে শ্রেনিভুক্ত করেছে৷ বি.১.১.৫২৯ ধরনটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ওমিক্রন৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে৷ ভাইরাসের ধরনটি এর মধ্যেই কয়েক দফা নিজেকে পরিবর্তন করেছে বলে জানা যাচ্ছে৷ বিদ্যমান টিকাগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কতটা কার্যকারি হবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷
যেসব দেশে ছড়িয়েছে
ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয়েছে সাউথ আফ্রিকাতে৷ সেখান থেকেই অন্যদেশগুলোতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
সাউথ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিস-এনআইসিডি জানিয়েছে, তারা ২২ জনকে ওমিক্রন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছে৷ এখন পর্যন্ত ১০০ এর কম জিন সিকোয়েন্স করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাইরাসটি যত ছড়াবে তার পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে৷ দেখা দিবে নতুন নতুন রূপও৷’’
শুক্রবার পর্যন্ত বেলজিয়াম, ইসরায়েল, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে ধরনটি শনাক্ত করা গেছে৷
জার্মানিতেও এরইমধ্যে ওমিক্রন পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করছেন হেসে রাজ্যের মন্ত্রী কাই ক্লোজে৷ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাউথ আফ্রিকা থেকে আগত এক পর্যটক করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷’’
নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, শুক্রবার সাউথ আফ্রিকা থেকে আগত দুইটি ফ্লাইটের ৬১ জন যাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়েছে৷ তাদেরকে এখন আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷
চেক রিপাবলিক নামিবিয়া থেকে আগত একজনের শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত করেছে৷ সেটি ওমিক্রনের কিনা তা নিয়ে পরীক্ষা চলছে৷
ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল জানিয়েছে, ইউরোপে করোনার নতুন এই ধরন ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে৷
দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া
আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিভিন্ন দেশ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধরনটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করার পরপরই প্রথম উদ্যোগ নেয় যুক্তরাজ্য৷ সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে যাতায়াত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইটালিও৷ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘‘সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমরা অবহিত হয়েছি৷ এই ভ্যারিয়েন্ট খুবই অ্যাগ্রেসিভ৷ এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ এখনই স্থগিত করা হচ্ছে৷’’
তবে তাড়াহুড়া করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পক্ষপাতি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত নির্ভর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ তাদের৷
অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণের সমালোচনা করেছেন সাউথ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি কিছু প্রতিক্রিয়া অন্যায্য৷’’
এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
শুক্রবার ওমিক্রনের ঝুঁকি বিষয়ে আলোচনা করতে জেনেভায় জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ ডব্লিউএইচও বলছে, ওমিক্রনে করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীরাও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে৷ এজন্য দেশগুলোকে নজরদারি বৃদ্ধি, ধরন শনাক্ত করার জন্য জিন সিকোয়েন্স কার্যক্রম চালু করা, শনাক্ত হলে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে তারা৷
ডব্লিউএইচও বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভাইরাসের ধরনটি নিজেকে অসংখ্যবার রূপান্তর করেছে৷ এর কোন কোনটির বৈশিষ্ট্য ভয়ের কারণ তৈরি করছে৷ তবে পিসিআর পরীক্ষায় এখনও ওমিক্রনকে শনাক্ত করা যাচ্ছে৷
টিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
ওমিক্রন নিজেকে যেভাবে বদলে ফেলেছে তাতে বিদ্যমান টিকাগুলো এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে৷ এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরো তথ্য সংগ্রহ করছে ডব্লিউএইচও৷ জেনেভার বৈঠকের আগে সংস্থাটির কোভিড-১৯ বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ডেভিড নাবারো বিবিসিকে বলেন, সাউথ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে৷ কেননা, টিকার কারণে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি সবাই মিলে এতদিনে গড়ে তুলতে পেরেছিল সেটি ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা এই ভাইরাসটির আছে বলে তার কাছে মনে হচ্ছে৷
এফএস/এআই (ডিপিএ, রয়টার্স, এপি, এএফপি)