1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা সংক্রমণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভীতি

আবদুর রহমান টেকনাফ
১৫ মে ২০২০

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯-এর প্রথম সংক্রমণ দেখা দিয়েছে৷ অথচ কোনোভাবেই সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না৷ মানা হচ্ছে না লকডাউন৷ 

https://p.dw.com/p/3cGxc
Bangladesch | Coronavirus | Flüchtlingslager
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Rahman

কুতুপালংয়ের একটি ক্যাম্পে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এখন এর বিস্তারের বিরাট ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে গাদাগাদি করে লাখো রোহিঙ্গা থাকেন৷ সেখানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউনের নিয়ম কানুন৷ 
নিয়ম না মানার বিষয়টি ডয়চে ভেলের কাছে নিশ্চিত করেছেন উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক৷ তিনি বলেন, ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় সেখানে সব চেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকি থাকলেও নেই প্রতিরোধমূলক কোনো কার্যক্রম৷ 
‘‘শুরু থেকে যে বিষয়টি নিয়ে ভয়ে ছিলাম সেটিই হয়েছে, এক জন ক্যাম্পের বাসিন্দার করোনা পাওয়া গেছে,’’ বলেন তিনি৷  
তিনি যোগ করেন, ‘‘ঘিঞ্জি ক্যাম্পের বসতিদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় কাজ করছে৷ কেননা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জানে না করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে৷’’
এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘‘ক্যাম্পে করোনা আক্রান্তের খবরে লোকজন ভয়ে আছে, কেননা, করোনা ছোঁয়াচে রোগ৷ তাছাড়া ক্যাম্পে ঘিঞ্জি বসতি, সেহেতু ঝুঁকিটাও বেশি৷ তবে এখন পর্যন্ত 
 চোখে পড়ার মতো কোনো করোনা সংক্রান্ত কার্যক্রম হয়নি৷ কিভাবে এই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়, সেটি অনেকে জানে না৷’’
তবে পুলিশ জানিয়েছে, সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে যেন তা আরো না ছড়ায় সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনা রোধে ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন নিশ্চিতে পুলিশ সেখানে আরো টহল বৃদ্ধি করবে৷ ইতিমধ্যে রোহিঙ্গার কাছে থেকে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে৷ তাদের সংস্পর্শে আসা পরিবারসহ অন্য ব্যক্তিদের কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে৷’’
এদিকে, করোনা রোধে সচেতনতাও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্প কর্মকর্তারা৷ টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষায় হাত ধোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সচেতনমূলক কার্যক্রম করতে বলা হচ্ছে৷ কিন্তু কিছু লোকজন তা অমান্য করে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রেখেছে৷ বিষয়টি কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে৷’’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে সাহায্য সংস্থাগুলোর জোট ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বলেন, ‘‘খাদ্য, পানি সরবারাহ, চিকিৎসা সেবা, স্যানিটেশনসহ জরুরি সেবাগুলো যথাযথভাবে চলছে৷’’
এদিকে, আক্রান্ত রোহিঙ্গাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি মেনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর ঢাকা অফিসের মুখপাত্র মোস্তফা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন৷
এর আগে, বৃহস্পতিবার উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা ব্যক্তির মাঝে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়৷ এছাড়া স্থানীয় এক বাসিন্দাও করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে৷ দু’জনেরই বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে হবে বলে জানা গেছে৷ এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায়  ১৩১ জন৷ তাদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা৷
এ বিষয়ে শরণার্থী  ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘‘প্রথম বারের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একজনের মাঝে করোনা ধরা পরেছে৷ গত দুই দিন আগে সন্দেহ হওয়ায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠালে পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে৷ তাদেরকে ক্যাম্পের আইসোলেশনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ তাছাড়া  পরীক্ষার জন্য আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদেরও নমুনা সংগ্রহ করা চ্ছে এবং আক্রান্তদের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) আইসোলেশন সেন্টার ও এমএমএফ হসপিটালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে৷’’ 
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুইজনের নমুনা সংগ্রহের পর মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে৷ তার মধ্যে একজন উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা৷ অন্যজন স্থানীয় বাসিন্দা৷’’ 
শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে গত ১১ মার্চ থেকে কক্সবাজারের ঘিঞ্জি রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার৷ এর মধ্যেই করোনা সংক্রমণ ঘটল৷ 

Erster Fall von Covid 19 in einem Rohingya-Camp in Bangladesch
করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সচেতন করছেন নৌবাহিনীর সদস্যরা ছবি: DW/Abdur Rahman
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান