করোনা সংকট: ফের বিতর্কে ট্রাম্প
১৩ এপ্রিল ২০২০ইউরোপে করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও অ্যামেরিকার পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। রবিবার রাত পর্যন্ত ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কোনও কোনও মহলের দাবি, প্রথম দিকে করোনা ভাইরাসকে ততটা গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে এখন। সময় মতো ব্যবস্থা নিলে এত মৃত্যু এড়ানো যেত। যদিও ট্রাম্পের পাল্টা দাবি, ঠিক সময়েই তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রথম যখন দেশের সীমান্ত সিল করা এবং চীন যাত্রা বাতিল করেছিলেন তিনি, তখনও অনেকে সমালোচনা করেছিলেন বলে অভিযোগ প্রেসিডেন্টের।
রবিবার নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা স্বয়ং অভিযোগ করেছেন, করোনার সঙ্গে লড়াই অনেক দেরিতে শুরু করেছে অ্যামেরিকা। আরও আগে ব্যবস্থা নিলে এত মৃত্যু হয়তো আটকানো যেত। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত অ্যামেরিকায় সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি লোকের। অভিযোগ, এর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দায় অনেকটাই। সময় মতো লকডাউন করলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম নীতি প্রণয়ন করলে সংক্রমণ খানিকটা কমানো যেত। বস্তুত, ফেব্রুয়ারি মাসেও এ সমস্ত বিষয়ে একাধিক বার ট্রাম্প প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টারা। কিন্তু সরকার রাজি হয়নি। মার্চ মাসেও ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, করোনাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ সাধারণ ফ্লুয়ে মারা যান। ইস্টারের মধ্যে অ্যামেরিকার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের সেই বক্তব্যগুলিকে সামনে রেখেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে।
তবে রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পরে পাল্টা তোপ দেগেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, এ সবই ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর। তাঁর দাবি, এর আগে তিনি যখন চীন যাত্রা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, তখন এই গণমাধ্যমই তাঁর সমালোচনা করেছিল। বস্তুত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করতে গিয়েও একই কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। দাবি করেছিলেন, তিনি করোনা নিয়ে যখন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলেন, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তার সমালোচনা করেছিল। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য বক্তব্য, বাস্তব ঠিক তার বিপরীত।
এ দিকে নিউ ইয়র্ক কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। শুধু সেখানেই আক্রান্ত প্রায় দুই লাখ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় হাজার। গোটা দেশের মোট আক্রান্তের ৩৪ শতাংশই নিউ ইয়র্কে। তারই মধ্যে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বহু গর্ভবতী মহিলাদের শরীরেও করোনা সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। গত কয়েক দিনে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও আরও সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
ইউরোপে অবশ্য সংক্রমণ আগের চেয়ে সামান্য হলেও কমেছে। ইটালি, ফ্রান্সে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা গত দুই দিনে অনেকটাই কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারপরিসংখ্যান বলছে, গোটা বিশ্বে মোট এক লাখ ১৪ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার লাখ ২২ হাজার জন।
ইটালি, ফ্রান্স এবং স্পেনে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও যুক্তরাজ্যের অবস্থা এখনও ভয়াবহ। মোট আক্রান্ত ৮৬ হাজার। মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে এরই মধ্যে রবিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে জনসনকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)