1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে সরকার

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৭ জুলাই ২০২০

করোনার সময়ে লোকের মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ দূর করার জন্য সচেষ্ট হলো সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে না পারলে অবসাদ যাবে না।

https://p.dw.com/p/3eu86
ছবি: Reuters/A. Abidi

দীর্ঘ লকডাউন, করোনার ভয়, চাকরি হারানো, বেতন কমে যাওয়া, পরিবার বা পাড়াপড়শির আক্রান্ত হওয়া, সামাজিক দূরত্ব, চার দেওয়ালের মধ্যে মূলত নিজেকে বন্দি রাখার প্রভাব এখন ভালোভাবেই পড়ছে সাধারণ মানুষের মনের ওপর। তাঁরা অবসাদগ্রস্ত হচ্ছেন। দুশ্চিন্তা ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ সহ মানসিক নানা ধরনের সমস্যা। আর ভারতে অজ্ঞানতার জন্য হোক বা অস্বস্তি বোধ করার কারণে হোক, লোকে এই মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। নিজের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে সমস্যা আরও বাড়ে।

এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব প্রীতি সুদান সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে বলেছেন, এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষ করে অবসাদ ও উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হবে। করোনা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ভালো কাজ করছে। কিন্তু এ বার লোকের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও তাদের নজর দিতে হবে।

আসলে করোনাকালে অবসাদ, উদ্বেগ ও তার ফলে আত্মহত্যারএকাধিক ঘটনা ঘটেছে ভারতে। এটা শুরু হয়েছিল একেবারে গোড়ায় লকডাউন চালু হওয়ার পরপরই। দক্ষিণ ভারতে একজন গ্রামের মানুষের মনে হয়েছিল, তাঁর করোনা হয়েছে। চিকিৎসক দেখানো নয়, কারও সঙ্গে কথা বলা নয়, তিনি সোজা গিয়ে গাছের ডালে দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

একদিন আগে এইমসের চারতলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন হিন্দি কাগজের এক সাংবাদিক। তাঁর করোনার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু তাঁর শেষ বার্তা ছিল, তাঁকে খুন করা হতে পারে। এইমসে তাঁর  ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে তারপর এইমসে নির্দেশ গিয়েছিল। চারতলা থেকে তাঁর ঝাঁপ দেওয়ার পিছনে সেই আতঙ্ক, অবসাদ কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ধরনের উদাহরণ প্রচুর। প্রীতি সুদান তাঁর চিঠিতে বলেছেন, লোককে একটা জিনিস বোঝাতে হবে, অবসাদ, উদ্বেগ, আতঙ্কের ঘটনা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। প্রায় প্রত্যেকের জীবনে কখনও না কখনও এই ধরনের পর্যায় আসে। তাই খোলাখুলি আলোচনা হওয়া দরকার। তা হলে যাঁরা অবসাদ ও উদ্বেগেভুগছেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন এবং তাঁরাও মুখ খুলবেন। তাই তাঁর প্রস্তাব, ''করোনা মোকাবিলার কৌশলের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলি নিয়েও প্রচার করতে হবে। তাঁদের সচেতন করতে হবে। তাঁদের মনোবিদ দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।''

২০১৭ সালে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন একটা সমীক্ষা করে। সেখানে দেখা গিয়েছে, প্রায় ২০ কোটি লোক মানসিক নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। তার মধ্যে অবসাদ আছে, উদ্বেগ, আতঙ্ক, মন খারাপ সহ আরও একাধিক বিষয়। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি লোক অবসাদ ও উদ্বেগে ভোগেন। আর করোনাকালে এই দুইটি বিষয় লোকের মধ্যে প্রবলভাবে বেড়েছে।

মনোসমাজবিদ মোহিত রণদীপ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সরকার যে শেষ পর্যন্ত এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই ভালো কথা। তবে করোনার সময় এই উদ্বেগ ও অবসাদ যে বাড়ছে তার অন্যতম কারণ, লোকের জীবনধারনের ন্যূনতম চাহিদা মেটানো নিয়ে চিন্তা। সরকারকে এই চাহিদা মেটাতে হবে। তা হলে লোকের উদ্বেগ, ভয়, আতঙ্ক কমবে।''

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব তাঁর চিঠিতে বলেছেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেসের সাহায্যে তাঁরা একটা ২৪ ঘণ্টার হেলপলাইন চালু করেছেন। তিনি এও বলেছেন, শহরের দিকে মানসিক চাপের প্রবণতা বেশি। আর ছোট পরিবার এবং সেখানে সামাজিক দূরত্বের ফলে মানসিক চাপ বাড়ছে।

মোহিত তো সরকারের করোনা নীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, ''সরকার নিজে জানে না কীভাবে করোনার মোকাবিলা করতে হবে। তারা বারবার কৌশল বদল করছে। প্রথমে তারা লকডাউন জারি করার সময় বলেছিল, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমলে তারা কড়াকড়ি তুলবে। উল্টোটা হলো।  যখন সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে, তখন সব খোলা হলো। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ যে বাড়ছে তা স্বাভাবিক। সরকারের কাজে স্বচ্ছতা নেই। ফলে লোকের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তাঁরা জানেন না করোনা হলে কী করবেন। লোকের জীবন ও জীবিকা বিপদের মুখে। তাই ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। না হলে এই মানসিক চাপ কমানো যাবে না।'' 

ফলে সাধারণ লোকের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার চেষ্টাটা ভালো। কিন্তু সেই সঙ্গে লোকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে তাঁরা মানসিক দিক থেকে ভালো জায়গায় থাকতে পারবেন না। তাঁদের অবসাদ আসতে বাধ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷