করোনা পরবর্তী বিশ্বে সাহসী পরিকল্পনার প্রয়োজন: ইউনূস
১৫ নভেম্বর ২০২০তাঁর মতে, এই মহামারীর কারণে যে লাখো-কোটি শ্রমিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, তাদের সহায়তার জন্য এমন ব্যাংক তৈরি করা দরকার৷ করোনা পরবর্তী বিশ্বের জন্য অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ় চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি৷
‘গরিবের ব্যাংকার' নামে পরিচিত এই বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘‘এই সংকট আমাদের জন্য সুন্দর, সবুজ ভবিষ্যতের পথ তৈরি করছে৷'' তবে বর্তমান সময়ে এটিকে টাইম বোমার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি৷
করোনা পরবর্তী সমাজে তিনটি ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেছেন তিনি:
এক. জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা
দুই. সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন
এবং তিন. গণ বেকারত্ব প্রতিরোধ করা, যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছে৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের বার্ষিক আয়োজন ‘ট্রাস্ট কনফারেন্সে' ইউনূস বলেন, ‘‘করোনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার দুর্বলতা৷'' তবে সবচেয়ে সংকটের মুহূর্তে সবচেয়ে সুন্দর ভাবনাগুলো বেরিয়ে আসে বলে মনে করেন তিনি৷ ততিনি বলেন,‘‘আমাদের উচিত পুরোনো চিন্তাগুলোকে দূরে ঠেলে সাহসের সাথে নতুন ভাবনাগুলো নিয়ে কাজ করা, যেগুলো আগে কখনো করা হয়নি৷''
অনলাইন এই সম্মেলনে ৮০ বছর বয়সি এই অর্থনীতিবিদ করোনা পরবর্তী সমাজ গঠনের ক্ষেত্রেসামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধানের উপর জোর দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কোন অর্থ বানানোর রোবট নয়, মানুষকে বাণিজ্যখাতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে, কেবল লাভের কথা ভাবলে হবে না৷'' বলেন,‘‘বাংলাদেশে ৭০ ভাগ শ্রমিকের কোন সঞ্চয় নেই, করোনার কারণে এই শ্রমিকরা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে৷'' তাই এই শ্রমিকদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘স্যোশাল বিজনেস মাইক্রো-অন্তপ্রনেরিয়াল ব্যাংক' প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ধনী দেশগুলোর করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিক্রির সমালোচনা করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘বিশ্বের একজন ব্যক্তি যদি অরক্ষিত থাকে, তাহলে সবার সুরক্ষিত থাকা সম্ভব নয়৷''
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেছেন, ‘‘সময় এসেছে বিকেন্দ্রীকরণের৷ বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে কেনো গ্রামগুলোতে কল সেন্টার স্থাপন করা সম্ভব নয়?'' অর্থাৎ শহরমুখী যে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি সেটাকে বিকেন্দ্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ করোনার আগের বিশ্বকে বৈশ্বিক উষ্ণতা, ধনী-গরীব বৈষ্যমের বিশ্ব বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘সেই সময়ে ফিরে যাওয়ার কোন দরকার নেই৷ কেননা সেটা এমন একটা ট্রেন যা আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো৷'' তাই তিনি ‘ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস' এর উপর জোর দিয়েছেন৷ অর্থাৎ কার্বন নির্গমনের হার শূন্যে নিয়ে আসা, সম্পদের বৈষম্য শূন্যে আনা এবং বেকারত্বের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা৷ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটাই সময় এগুলোকে বাস্তবায়ন করার৷
এপিবি/কেএম (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)