1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে দিশেহারা পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ জানুয়ারি ২০২২

ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে ফের ধাক্কা পর্যটনে৷ কোভিডের বাড়াবাড়িতে ভ্রমণের মৌসুমে বন্ধ উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র৷ ক্ষতি ঠেকাতে ৫০ শতাংশ পর্যটককে ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে কেন্দ্রগুলি খোলা রাখার দাবি সংশ্লিষ্টদের৷ 

https://p.dw.com/p/45IFz
Indien Westbengalen | Coronakrise: Tourismus leidet unter Teillockdown
করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবিতে আন্দোলন করছেন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা৷ ছবি: Payel Samanta/DW

করোনা মহামারির কারণে গত দুবছর ভাটা পড়েছিল ভ্রমণে৷ তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলে যাওয়ার পর আশা জেগেছিল, শীতের মৌসুমে পর্যটন ব্যবসা জমে উঠবে৷ কিন্তু হঠাৎ করেই তৃতীয় ঢেউ এসে পড়ায় মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের৷ শুধু তাই নয়, রোজগার কমেছে এ খাতের সঙ্গে জড়িত সবারই৷

বলা হয়ে থাকে, পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের সবচেয়ে জনপ্ৰিয় গন্তব্য পাহাড়ি এলাকাগুলো৷ সেখানে শীতের মৌসুমে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা৷ কিন্তু এবার শীতেই চলে এলো করোনার তৃতীয় ঢেউ৷

গত কোভিড ঢেউয়ের সময় পাহাড়ে করোনা সংক্রমণের ধীর গতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল৷ গত বছর পাহাড়ে দুজন এবং ডুয়ার্সে একজন পর্যটক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে এবার সংক্রমণের শুরুতেই আক্রান্ত সাতজন পর্যটক৷

এদিকে করেনাার বিস্তার রোধে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সব পর্যটনকেন্দ্র, সাফারি পার্ক বন্ধ রাখতে বলেছে৷ 

‘এ খাতের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য কর্মী বাড়ি ফিরে গেছেন’

পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি দেবাশিস মৈত্র বলেন, ‘‘দুই বছর পর এবার আমাদের একটু লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল৷ সেপ্টেম্বরে খোলার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পংয়ে আর রুম ছিল না৷ প্রচুর ব্যবসা হয়েছিল৷ কিন্তু হঠাৎ বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় ৯৫ শতাংশ পর্যটক ফিরে গেছেন৷ সব হোটেল খালি৷ অথচ সিকিম, আসাম, অরুণাচল প্রদেশে ট্যুরিজম কোভিড প্রটোকল মেনে খোলা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এতে শুধু উত্তরবঙ্গের প্রায় হাজার খানেক হোটেল মালিকদের ক্ষতি তা নয়, বরং এ খাতের উপর  নির্ভরশীল অসংখ্য কর্মী কাজ না থাকায় বাড়ি ফিরে গেছেন৷ বহু ট্রাভেল এজেন্সির অফিস বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছি৷’’

সুন্দরবন শীতের ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস প্রতি বছর বহু পর্যটক টেনে আনে৷ কিন্তু চলতি বছর হোটেল, লঞ্চ, বোটসহ সুন্দরবন ট্যুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষেরা দিশেহারা৷

টিউলিপ হোটেলের মালিক সুপ্রিয় মণ্ডল বলেন, শীতে বন্য জন্তু রোদ পোহাতে বাইরে বেরোয়, তাই তাদের দেখার টানে পর্যটকরা আসেন৷ তাতেই আমাদের সারা বছরের রোজগার হয়৷ গত বছর মার্চে লকডাউন হওয়ায় শীতে ব্যবসা কিছুটা হয়েছিল৷ কিন্তু এবার ৩ জানুয়ারি বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল৷’’

সুন্দরবনের পূর্বাশা ইকো ট্যুরিজমের বোটমালিক দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘সবে ডিসেম্বরের দশ তারিখ থেকে পর্যটকরা আসা শুরু করেছিলেন৷ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস অবধি প্রত্যেকের ভালই বুকিং ছিল৷ পাখিরালয়, সজনেখালিতে ৪৩৭টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বোটসহ লঞ্চগুলিতে প্রায় দেড়-দু হাজার পর্যটক রোজ সফর করেন৷ লকডাউনের জন্যে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলের৷’’

উত্তর থেকে দক্ষিণে পর্যটনস্থলের ছবি যখন এমনই, তখন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সরকারের নীতি বদলের দাবি তুলছেন৷ বিধিনিষেধ অনুযায়ী, সিনেমা হল, জিমনেসিয়াম ৫০ শতাংশ মানুষের উপস্থিতি রেখে খোলা রাখা যাবে৷ এগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়নি৷

‘বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল’

এই উদাহরণ তুলে ধরে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত মানুষদের বক্তব্য, ‘‘হোটেল থেকে শুরু করে পর্যটকদের যানবাহন- সর্বত্র ৫০ শতাংশ পর্যটক নিয়ে আমরা ব্যবসাটা চালিয়ে যেতে পারি৷ ফলে মানুষ অন্তত কর্মহীন হবে না৷’’

দেবাশিস বলেন, ‘‘সব বন্ধ করা হলে আমাদের কিছু বলার ছিল না৷ কিন্তু শপিংমল, সিনেমা হল যদি খুলে রাখা যায়, তাহলে পর্যটনকেন্দ্র নয় কেন? সুপ্রিয় বলেন, ‘‘৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে যদি জঙ্গল খোলা হয়, তাহলে সুন্দরবনের পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা অন্তত খেতে পাবে৷’’

দেশের ভ্রমণ মানচিত্রের ছবি কমবেশি এ রকমই৷ রাজধানী দিল্লিতে এই সময় পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে৷ কিন্তু তৃতীয় ঢেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকরা রাজধানী ছেড়েছেন৷ এর ফলে ব্যবসার পরিধি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ৷

এখন দুবাইতে ভারতের পর্যটন সপ্তাহ পালিত হচ্ছে৷ সেখানে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, ‘‘ভারত এই বছর পাঁচ লক্ষ ই-ট্যুরিস্ট ভিসা বিনামূল্যে দিতে চলেছে, যাতে পর্যটন শিল্প লাভবান হয়৷’’

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে এই শিল্প বছরের গোড়ায় যে ধাক্কা খেল, তার ক্ষতি পূরণ করতে অনেকটা সময় লেগে যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷