ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর পতনের ২৫ বছর
আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক বার্লিন প্রাচীর ভাঙার মধ্য দিয়ে দুই জার্মানির একত্রীকরণ হয়েছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানির শান্তিপূর্ণ বিপ্লব, বার্লিন প্রাচীরের নানা কথা থাকছে এই ছবিঘরে৷
বিশ্বের ইতিহাস বদলে দেয়া আন্দোলন
২৫ বছর আগে পূর্ব জার্মানির লাইপশিস শহরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের মধ্য দিয়ে এক আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যে মিছিলে অংশ নিয়েছিলো ৭০,০০০ মানুষ৷ সেই মিছিলের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল অন্যান্য শহরেও৷ ভেঙে গিয়েছিল বার্লিন প্রাচীর৷ বিশ্বের ইতিহাসে জন্ম নিয়েছিল এক নতুন ইতিহাস৷
‘চেক পয়েন্ট চার্লি’
বার্লিন প্রাচীর ঘেঁষে ছিল এই সীমান্ত পাহারা কেন্দ্রটি, যেটা চেক পয়েন্ট চার্লি নামেই পরিচিত ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র বাহিনীর সেনা এবং কূটনীতিকরা যাতায়াত করতেন এই রাস্তা দিয়ে৷ রাস্তাটি ছিলো ১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত৷ বর্তমানে এই ঐতিহাসিক জায়গায় একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে৷
এখন তাঁরা সবাই এক জনগোষ্ঠী
যে প্রাচীর টপকাতে গেলেই মৃত্যুর ভয় ছিলো সে প্রাচীর খুলে দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরই সমস্ত ভয় কেটে যায় জার্মান জনগণের৷ প্রাচীরের সামনে পেছনে, ওপরে, সব জায়গায়ই যেন আনন্দের বন্যা বইছিল৷ এখন পূর্ব আর পশ্চিমের মানুষ বলে কিছু নেই, এখন তাঁরা সবাই এক জনগোষ্ঠী৷
সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে প্রতিবাদ আন্দোলন পোঁছে পূর্ব জার্মানির রাজধানী পূর্ব বার্লিনে৷ হাজার হাজার মানুষ সংস্কার ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে৷ তবে তাঁদের লক্ষ্য ছিলো, এসময় যেন কোনো হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটে৷ এটা ছিলো পূর্ব জার্মানি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ৷
বিরোধীরা আরো সক্রিয় হয়
পূর্ব বার্লিনের আলেকজান্ডার প্লাৎসে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভটি সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার করা হয়৷ বিক্ষোভকারীরা ভ্রমণ ও সমাবেশ অনুষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানায় সেখানে৷
স্বপ্ন যখন সত্য হয়
১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর রাতে অনেক স্মরণীয় ঘটনা ঘটে৷ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব জার্মানির শত শত নাগরিক হেঁটে, সাইকেলে এবং ট্রামান গাড়িতে করে পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশ করে৷ সেদিন চেক পয়েন্ট চার্লি বা সীমান্ত পাহাড়া কেন্দ্রে মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে, ঠিক যেন কোলনের কার্নিভালের মতো৷
বার্লিন প্রাচীরের আসল টুকরো
ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজনীতিকদের লক্ষ্য ছিলো ১৯৬১ সালে বার্লিন প্রাচীর তৈরির সময়কার কিছু ইটের নমুনা যেন বন শহরের ইতিহাস বিষয়ক মিউজিয়ামে স্থান পায়৷ আজ সেই স্মৃতিচিহ্ন মিউজিয়াম দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়৷
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বরের রাতে ডয়চে ভেলের বিভিন্ন ভাষা বিভাগের কর্মীরা সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ‘ভ্রাম্যমাণ ট্রান্সমিটার’ নিয়ে উপস্থিত ছিলেন ডুডারস্টাট শহরের সীমান্তে৷ সে দলের সঙ্গী হয়ে ছিলাম আমিও৷ পূর্বের মানুষেরা এত বছর পর কীভাবে মিলিত হচ্ছেন পশ্চিমের মানুষদের সঙ্গে সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার৷ সবার চোখে ছিল জল আর ঠোঁটে হাসি৷ স্বচক্ষে দেখা এ ঘটনা কোনোদিনই ভোলার নয়!
কলকাতায় উদযাপন
বার্লিনের প্রাচীর পতনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জার্মান কনসুলেটের উদ্যোগে কলকাতায় নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক গ্রাফিতি ও হিপ হপ কর্মশালা উল্লেখযোগ্য৷ ছবির এই দেয়ালচিত্রটি কলকাতা থেকেই পাঠানো৷
কূটনীতিকদের বাগানে রিফিউজি ক্যাম্প
১৯৮৯ সালের গ্রীষ্মে সাবেক পূর্ব জার্মানির জনগণের কাছে এই জায়গাটি খুবই জনপ্রিয় ছিলো৷