এভাবেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশ
১৮ অক্টোবর ২০১৬এ ধরনের লাঞ্ছনা বা হয়রানির শিকার হলে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা-ই জানিয়েছেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান৷
তাঁর ফেসবুক পাতায় এক তরুনীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেছেন তিনি৷ ইমরান লিখেছেন, ‘‘মাকে নিয়ে গাউছিয়াতে শপিং করতে গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী৷ একটি দোকানে জিনিস দেখার পর পছন্দ না হওয়ায় মেয়েটি অন্য দোকানে যেতে চাইলে ঐ দোকানী বাজে ভাষায় তাদের লাঞ্ছিত করে৷ এমন ব্যবহারে স্কুল শিক্ষিকা মা এবং মেয়েটি হতভম্ব হয়ে যায়৷ দোকানীর দুর্ব্যবহার এবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, মারতে উদ্যত হয়৷ লোকটার পক্ষ নেয় অন্য দোকানীরা৷ মা-মেয়েকে শুনতে হয়, ‘মাইয়া মানুষ হইয়া ঝগড়া করেন ক্যান? চুপচাপ মাথা নিচু কইরা কাইটা পড়েন!''
ভুক্তভোগী তরুনী এর প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ কিন্তু কীভাবে, কার কাছে যাবেন বুঝতে পারছিলেন না৷ তারপর ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ ‘জাস্টিস ফর উইমেন'- এ একটা পোস্ট দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘নিউমার্কেট এলাকায় কেউ যদি দুর্ব্যবহার করে, তাহলে কোথায়-কিভাবে অভিযোগ করতে হবে?''
পোস্টটি আব্দুল্লাহ আল ইমরানের চোখে পড়ে৷ তাঁর মনে পড়ে যায় নিউ মার্কেট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের কথা৷ যিনি এর আগে হাতিরপুলে সিএনজি অটোরিক্সায় একটি হয়রানির ঘটনার নাগরিক প্রতিবাদের সময় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন৷ তখনই ইমরানকে তাঁর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে অন্য কাউকেও নাম্বারটি দিয়ে তিনি সাহায্য করতে পারেন৷ পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুন ইমরানকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এই এলাকায় কোনো অনিয়ম চোখে পড়লেই যেন তাকে জানান৷
গাউসিয়ায় এক তরুনীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাটিও ইমরান ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান৷ পরে ওই তরুনী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন৷ পাশাপাশি ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডিএমপির এক অতিরিক্ত কমিশনারকেও ঘটনাটি জানিয়ে রাখেন৷
তরুনীর সেই অভিযোগের জেরে ঐ দোকানীকে আটক করে পুলিশ৷ অপরাধীকে সোজা চালান করে দেয়া হয় আদালতে৷
নিজের ফেসবুক পাতায় পুরো ঘটনাটিই লিখেছেন ইমরান৷ পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ কোনো অন্যায়ের শিকার হলে ‘নাজমুন নাহার, সহকারী কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নিউ মার্কেট সার্কেল, ঢাকা' বরাবরে কীভাবে অভিযোগ পত্র লিখতে হবে৷
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘নিউমার্কেট এলাকায় প্রতিনিয়ত অনিয়ম-দুর্ভোগের শিকার নারীদের মধ্যে যারা অন্যায়ের সত্যি সত্যিই প্রতিবাদ করতে চান, তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়া এই আইনি পথটি অনুসরণ করতে পারেন৷ মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবাদটি অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না৷ শুরুটা অন্তত আপনাকেই করতে হবে৷ এই দেশে কিছু হয় না বলে যারা পাশ কাটিয়ে যান, যারা প্রতিবাদের বদলে প্রতিনিয়ত অন্যায়কে মেনে নেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, নিজের জায়গা থেকে একটুখানি আওয়াজ তুলুন৷ জনারণ্যে শুরুতে সেই আওয়াজ বড় ক্ষীণ আর বেমানান ঠেকলেও ধীরে ধীরে দেখবেন আরো শহস্র আওয়াজ আপনার দিকে ছুটে আসছে৷ গণমানুষের সম্মিলিত সেই আওয়াজের সামনে দাঁড়ায়, এমন অপশক্তি কোথায়?''
দোকানীকে আটকের ভিডিওটি ধারণ করে রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান৷ এ পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে৷ ৯ হাজার বার শেয়ার হয়েছে৷ আর কমেন্ট পড়েছে অন্তত ১৬ হাজার৷
এ.এস সফিক ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের যা অবস্থা, তাতে এমন সাহসী উদ্যোগ এবং প্রতিবাদে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারে নারী অধিকার ও স্বাধীনতা! ওয়েল ডান ইমরান ভাই৷''
লেখাটি পোস্ট করার পর অনেক নারী চাকুরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলে কী করতে হবে জানতে চেয়েছেন৷ ইমরান তাদের পরামর্শও দিয়েছেন৷ অনেকেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ‘‘ইমরান তোমার জন্য গর্ব হচ্ছে৷''
অনেক মেয়েই সেখানে শেয়ার করেছেন নিজেদের নিগৃহীত হওয়ার নানা ঘটনা৷
আকরামুল হক ফেসবুকে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের দারুন সহযোগিতার কথা৷ লিখেছেন, ‘‘এভাবেই বদলাবে আমাদের দেশ৷''
মন্টি মনি লিখেছেন, ‘‘স্যালুট ভাইয়া, আমরা মেয়েরা প্রায়ই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হই, তারা সংখ্যায় বেশি থাকায় প্রতিবাদের ইচ্ছেটা ভেতরে ভেতরে খুব পোড়ায়৷ নিজের সম্মান নিয়ে কোনো অপরাধ না করেও মাথা নিচু করে দাঁতে দাঁত কামড়ে চলে আসা ছাড়া কোনো কিছুই করার থাকে না৷ আপনার এই পোস্ট দেখে অনেক শান্তি পেলাম৷''
আরিফ খান লিখেছেন, ‘‘এই মেয়েটির মতন আপনিও সচেতন হন৷ আপনার নিজের অধিকার নিজেই আদায় করতে শিখুন৷''
জয় ব্রায়ান লিখেছেন, ‘‘একদিন দেশটা এভাবেই পুরো বদলে যাবে৷ একা একা বদলে যাবে না৷ বদলাতে হবে আমাদেরই৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী