এবারও কি সিন্ডিকেট?
২০ ডিসেম্বর ২০২১মালয়েশিয়ায় এর আগে কর্মী পাঠানোর নানা অনিয়মের জন্য দায়ী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিও সক্রিয়। তাদের সাথে যুক্ত আছে মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী একটি চক্র। আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারও আগের মত ২০-২৫টি এজেন্সির হাতে চলে যাবে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি। আর যদি তাই হয় তাহলে আবারও নানা প্রতারণার মুখে পড়বেন মালয়েশিয়ায় যেতে চাওয়া বাংলাদেশি বেকার যুবকেরা।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন সাক্ষরিত এমওইউ এ অভিবাসন খরচ কত হবে তা বলা হয়নি। বলা হয়েছে নিয়োগকর্তাই সব খরচ বহন করবেন। আর এজেন্ট ঠিক করবে মালয়েশিয়ার সরকার। আর এই সুযোগে নিয়োগকর্তার নামে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়া হতে পারে। এবার রিক্রুটমেন্ট হবে অনলাইনে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে কারা সেটাও চূড়ান্ত হয়নি। বাছাই প্রক্রিয়া কী হবে তাও স্পষ্ট করা হয়নি। আর এইসব প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার আগের সিন্ডিকেট ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে।
এখনো নিশ্চিত করা যায়নি যে, সব রিক্রুটিং এজেন্ট লোক পাঠাতে পারবে, না নির্দিষ্ট কয়েকটি এজন্সিকে কাজ দেয়া হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০-২৫টি এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে আরো ২০০-২৫০টি এজেন্সিকে সাব এজেন্ট নিয়োগ করা হবে। এজেন্ট এবং সাব এজেন্ট-এর এই পদ্ধতি অভিবাসন ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেবে।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে এবার পাঁচ বছর মেয়াদে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ কর্মী নেবেন তারা। এর আগের বার ১০ লাখ লোক নেওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত নিয়েছে সাত লাখ ২১ হাজার কর্মী।
ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান জানান,"২০০২-২০০৩ সাল থেকে মালয়েশিয়া বেশ কয়েকবার নতুন চুক্তি করেছে আবার বাতিল করেছে। প্রতিবারই তারা বলেছে সিস্টেমের গলদের কারণে প্রতারণা হয়েছে। অনেক বেশি অর্থ আদায় করা হয়েছে। মানব পাচার হয়েছে। এসব অবৈধ কাজে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী পর্যন্ত জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় অনেক বেড়ে যায় । যদি এবারও সিন্ডিকেট হয় তাহলে একই অবস্থা হবে।”
অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন মনে করেন," সিন্ডিকেট ক্ষতিকর। আবার বাংলাদেশের এক হাজার ৫০০ রিক্রুটিং এজেন্ট-এর সবার জন্য ওপেন করাও সমস্যা। সবার জন্য ওপেন করলে তারা মালয়েশিয়ায় গিয়ে নিলাম শুরু করতে পারে। তাই প্রয়োজন যোগ্য এজেন্টদের বাছাই করা।”
এবার অভিবাসন খরচ সর্বোচ্চ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা হতে পারে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। কিরন বলেন,"মালয়েশিয়া যতই বলুক পুরো খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন বাস্তবে এটা কথার কথা। আমাদের দাবি হলো সরকার নির্ধারিত খরচের বাইরে যাতে কেউ না নিতে পারে এবং যাতে কেউ প্রতারিত না হন।”
অনলাইনে সফটওয়ারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এবার যুক্ত হচ্ছে। তাদের অধীনে কাজ করবে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজন্টরা। তারাই এখানকার এজেন্ট ঠিক করার কথা বলে জানান বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার। তিনি বলেন,"যদি সিন্ডিকেট না হয় তাহলে আমরা ধারাবাহিকভাবে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারব। কোনো ঝামেলা হবে না। যে টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়ে চাইলে আরো দুইটি পদ্মাসেতু তৈরি করা যাবে।”
তিনি অভিযোগ করেন,"আগে যারা সিন্ডিকেট করেছে তারা ১০০-২০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে রাতারাতি। বেগমপাড়ায় টাকা পাচার করেছে। তারাই এখন আবার সিন্ডিকেট করতে চায়। সেটা হলে মালয়েশিয়া যেতে অনেক টাকা লাগবে। মানুষ প্রতারিত হবে। আবার লোক নেয়া বন্ধ হবে। তবে আশা করি সরকার এবার সেটা হতে দেবে না।”
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি আশ্বস্ত করেছেন এবার সিন্ডিকেট হবে না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন এখনো চুক্তির বিষয়গুলো এখনো প্রকাশ করা হয়নি। হলে তখন স্পষ্ট হবে যে আসলে কী হতে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিএমইটির হিসাব মতে এপর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছেন।