এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ
১১ মার্চ ২০১৭দুই সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো কোম্পানির দামবৃদ্ধির প্রস্তাব এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা পড়বে৷ তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াবে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল৷ এখন সেটা বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে৷ যারা গ্যাস ব্যবহার করেন না তারাও এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ সরকার আসলে জনগণের উপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে৷''
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিইআরসি এবং পিডিবি সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের গড়ে খুচরা মূল্য ৬ টাকা ৭৩ পয়সা৷ গত বৃহস্পতিবার ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি৷ ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধিসহ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম অন্তত ৭ টাকা ৭১ পয়সা নির্ধারণ করতে চায় সংস্থাটি৷ অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ৯৮ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে৷ আগামী ১ এপ্রিল থেকেই নতুন পাইকারি ও খুচরা মূল্যহার কার্যকর করার অনুরোধ করা হয়৷
এর আগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া বর্তমান মূল্যহার সমন্বয়ের সময় পিডিবি ২২ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করলেও বিইআরসি গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করেছিল৷ বিদ্যুৎ বিতরণকারী ছয়টি সংস্থা ও অন্য কোম্পানিগুলোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রস্তাবে তারা বিদ্যুতের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন৷ আর বিইআরসি'র সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের দাম বাড়লেও তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ছে না৷ তবে এ খাতের উন্নয়নে ও সরকারের নির্দেশনার কারণে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বা ৩৩-৩৫ পয়সা পর্যন্ত বাড়তে পারে৷ আগামী আগস্ট মাস থেকে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
বিইআরসির সদস্য সচিব ফয়জুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আসলেই তো আর বাড়বে না৷ এরজন্য প্রক্রিয়া আছে৷ কারিগরি কমিটি মূল্যায়ন করবে এবং গণশুনানির আয়োজন করা হবে৷ এছাড়াও আরো কিছু পদক্ষেপ আছে৷ সার্বিকভাবে মূল্য সমন্বয় হতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে৷''
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় বিইআরসির এক মূল্যায়নেই বলা হয়েছে তেলের দাম কমায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমেছে ৩৪ পয়সা৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে দুই ধাপে গ্যাসের মূল্য বাড়বে ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ৷ এর ফলে প্রতি ইউনিটে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ৩৪ পয়সা৷ অর্থাৎ সার্বিকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ে পড়বে না৷ গ্যাসের দাম বাড়ায় যে খরচ বাড়বে, তেলের দাম কমায় তা মিটে যাবে৷ আর তেলের দাম আরো কমানোর সুযোগ সরকারের হাতে রয়েছে৷
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতারা বলে আসছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো অন্যায্য হয়েছে৷ এখন বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাও অযৌক্তিক৷