1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার পূজায় যে কারণে আশঙ্কা বেশি

১২ অক্টোবর ২০২৩

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবার দুর্গাপূজায় আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। একই সঙ্গে পুজার সময় গুজবের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/4XSB9
ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকা (ফাইল ফটো)
ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকা (ফাইল ফটো)ছবি: Zobaer Ahmed/DW

এর আগে গুজব ছড়িয়ে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা এখনো তাদের তাড়া করছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, পূজায় যাতে কোনো সহিংসতা বা হামলার ঘটনা না ঘটে সেজন্য তাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। আর গুজব ছড়িয়ে যাতে কেউ কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে সেজন্যও তারা সতর্ক আছেন।

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অতীত উদাহরণ আছে। এবার পূজার দুই মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন তাই আশঙ্কাও বেশি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন,"এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুজনই সামনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব তাই সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হবে। যেভাবেই হোক তারাই যখন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাহলে তো আমরা আর আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারি না।”

তার কথা,"১৯৯১ এবং ২০০১ সালে আজকের মত পরিস্থিতি ছিল না। সবাই একসাথে নির্বাচন করেছে। তারপরও আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। ওই সময়ের পরেও আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। ২০০৯ সালের আগে আমাদের ওপর হামলা ছিলো স্টেট স্পন্সরড। এরপরে যে হামলাগুলো হয়েছে তা পলিটিক্যাল পার্টি স্পন্সরড। এবার পরিস্থিতি তো খারাপ।  রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে আছে। তাই শঙ্কাও বেশি।”

তিনি মনে করেন,"সরকার চাইলে হামলা বন্ধ হয়, না চাইলে বন্ধ হয় না। ২০২১ সালে পূজার সময় হামলা হয়েছে। কিন্তু তার পরের বছর ২০২২ সালে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা হয়েছে। সুতরাং সরকার চাইলে পারে। এবছর আমাদের শঙ্কা আছে। তবে সরকার চাইলে শঙ্কা দূর করতে পারে।” পরিষদের পক্ষ থেকে তারা বুধবার নির্বাচন কমিশনে নিরাপত্তা চেয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

‘এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত আছে যারা সব সময় ওঁৎ পেতে থাকে’

এবছর ঢাকাসহ সারাদেশ ৩২ হাজার ৪০৭টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপুজার প্রস্তুতি চলছে। এরমধ্যে ঢাকায় পূজা হবে ২৪৩টি মণ্ডপে। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিসহ সরকারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে পূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। তারা নিজেরাও এবার মণ্ডপের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, "আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে পূজা নিয়ে বৈঠক করেছি। সবাই আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবেই শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। ”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"সমাজে তো দুর্বৃত্ত আছে। তাই আশঙ্কা তো সব সময়ই থাকে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে আন্তরিক নিরাপত্তার ব্যাপারে তাতে আমরা এখন  পর্যন্ত আশ্বস্ত বোধ করছি।”

ঢাকার বাইরে এপর্যন্ত ছয়-সাতটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির সময় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক। তিনি বলেন,"এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত আছে যারা সব সময় ওঁৎ পেতে থাকে। তারা সুযোগ পেলেই প্রতিমা ভাঙচুর করে। ছয়-সাতটি প্রতিমা তৈরির সময় দুর্বৃত্তরা ভেঙেছে। এর বাইরে আর কোনো খারাপ খবর নেই আমাদের কাছে। তবে আমরা প্রতিমা তৈরির সময় মণ্ডপের লোকজনকে ২৪ ঘন্টা মণ্ডপে অবস্থানের জন্য বলেছি। অনেকে সেটা না করায় প্রতিমা ভাঙচুরের সুযোগ পেয়েছে দুর্র্বৃত্তরা।”

তিনি বলেন,"পূজা যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসমুখর পরিবেশে হয় সে জন্য আমরা সরকারের সব পর্যায়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ  রাখছি। বৈঠক করছি। সরকার যা করছে আমার মনে হয় এর চেয়ে আর বেশি করার কিছু নেই। এবার পুলিশ, গোয়েন্দাসহ সব ধরনের ফোর্সই থাকছে। আনসার ভিডিপি থাকবে দুই লাখের বেশি। আর আমরাও আমাদের দিক থেকে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য বলেছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগাতে বলা হয়েছে।”

‘পূজায় তিন পর্যায়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে’

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"এই সর্বাত্মক নিরাপত্তা প্রন্তুতির পর আমার মনে হয় না কোনো হামলার বা সহিংসতার আশঙ্কা আছে।” তবে নির্মল কুমার চ্যাটার্জি মনে করেন সব মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে। পূজা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে হয় তাই এই সময়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) এনামুল হক সাগর জানান,"পূজার  সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের আইজি মহোদয় এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পুজায় তিন পর্যায়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজার আগে, পূজা চলার সময় এবং পূজার পরে।  ওই সময়ে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন,"আর অতীতে দেখা গেছে গুজব রটিয়ে পূজার সময়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো চেষ্টা করা হয়ে থাকে। সেটা এবার যাতে না ঘটে তার জন্য সোশ্যাল মনিটরিং, সাইবার প্যাট্রোলিং, বিট পুলিশিং আরও জোরদার করা হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে এধরনের ঘটনা ঘটতে না পারে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

পূজা মণ্ডপ এবং মণ্ডপের বাইরে নিরাপত্তা থাকবে। তবে ফোর্স কীভাবে মোতায়েন করা হবে তা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। পূজা কমিটিরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আর ছয়-সাতটি মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,"আমার কাছে এখন পর্যন্ত এব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।”