এবার পূজা মণ্ডপ বেশি, আছে আশঙ্কাও
৫ অক্টোবর ২০২১এদিকে, দেশের কয়েকটি স্থানে পূজা মণ্ডপ ভাঙচুর এবং ভয় ভীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
গত বছর কারোনার মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ হাজার ২১৩টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এবার পূজা হবে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে। ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৩৮টি। যা গতবারের চেয়ে চারটি বেশি। পূজার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবার তিন কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। এই অনুদানও গতবারের চেয়ে বেশি। এরইমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ সার্বিক আয়োজন ও নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছে।
স্বাস্থ্যবিধি ও নিরপাত্তা সংক্রান্ত ২৮ দফা নির্দেশনা এরইমধ্যে সব মন্ডপের পূজা উদযাপন পরিষদকে কেন্দ্রীয়ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ১১ অক্টোবর পুজা শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ফূজা শেষ হবে। ১৫ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজ থাকায় নামাজের সময় দুপুরে বিসর্জন অনুষ্ঠান না করতে বলা হয়েছে। উদযাপন করতে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এবছর মহালয়া অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিত সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রা করা যাবে না। মণ্ডপে হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন," সব দেশেই কিছু খারাপ লোক থাকে তবে আমরা ভীত নই। আমরা সরকারের স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি অভিযোগ করেন," পূজার প্রস্তুতি চলাকালে কুষ্টিয়া চারটি পূজা মণ্ডপ, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, চাঁদপুর ও গাইবান্ধায় প্রতিমা এবং মণ্ডপ ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।” তিনি জানান,"মুন্সিগঞ্জের একটি কালী মন্দিরের অবমাননার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো দুই-একটি ঘটনায় গ্রেপ্তারের খবর আমরা পেয়েছি। দেখা যায় প্রতি বছরই পূজার আগে দুর্বৃত্তদের এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। আর এবার বিশ্ব জুড়েই এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা আছে। তাই আমরা প্রতিটি মণ্ডপেই নিজস্ব নিরপাত্তার ব্যবস্থা করছি।”
তিনি জানান, সাধারণত নির্দিষ্ট বড় কিছু মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আর সাধারণ ভাবে পুলিশ টহল দেয়।
ভোলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে ভোলা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্মল কুমার চ্যাটার্জি দাবি করেন,"তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। একটি ইসলামি দলের হুমকির মুখে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার অপরাধ প্রমাণ না হলে তাকে কেন কারাগারে রাখা হবে। তাকে পূজার আগে মুক্তি দেয়া হোক। গত কয়েক বছর ধরেই ভোলায় হিন্দু সম্প্রদায় হামলা এবং চাপের মুখে আছে। আমরা কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করবনা।”
পূজার আগে মণ্ডপ এবং প্রতিমা ভাংচুর এবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি মনে করেন,"২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন আছে। তাই স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি খারাপ করা জন্য সুযোগ নেবে। আশঙ্কা করছি পূজা যত এগিয়ে আসবে পূজা মণ্ডপে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা আরো বেড়ে যাবে।”
তার মতে, যে সাম্প্রদায়িক শক্তি ২০০৮ সাল থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাদের দেশ ছাড়া করছে তারা এখনো সক্রিয়। বিচারহীনতার কারণে এই পরিস্থিতি। ঝুমন দাসকে বিনা অপরাধে ছয় মাস কারাগারে থাকতে হলো। কিন্তু এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের কিছুই হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন,"সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘুদের চাপের মুখে ফেলে নিরাপত্তাহীন করা হচ্ছে।”
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান জনান,"পূজার নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বুধবার বৈঠক আছে পুলিশ সদর দপ্তরে। সেখানেই সার্বিক বিষয় চূড়ান্ত হবে।” সাধারণভাবে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি পুলিশ ও র্যাব পূজার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। থাকে সাদা পোশাকে পুলিশ। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুই দিন আগে বলেছেন,"পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কোনো নাশকতাকারী উৎসবে যেন বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটি এবং জাতীয় উৎসবের মত পালনের দাবি জানিয়েছে।