আবার নির্বাচনের বছর আসায় লেখাটির কথা মনে হলো৷ ‘গণতন্ত্র, তুই আবার কবে আসবি?’ লেখাটি আবার পড়ে মনে হলো এই কয়েক বছরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়া, গণমাধ্যমের স্বেচ্ছায় পরাধীন হয়ে থাকা - সবই এখনও আছে৷ বিরোধী কর্মীদের ধরপাকড়, জেলে পুরা সেটাও চলছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা মানুষের সংখ্যা এই চার বছরে আরও কমেছে৷ আর সরকারপ্রধানের সমালোচনা করাতো রীতিমতো পাপ! কেন বলছি এই কথা? তাহলে পড়ুন এই লেখাটি ‘শেখ হাসিনা ও অন্য নেতাদের নজর কাড়ার হাতিয়ার ডিজিটাল আইন’৷ সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের শুধু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা কয়েকটি মামলার কথা আছে৷ এছাড়া ২০২০ সালে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘অবমাননাকর' পোস্ট করায় ১৫ বছরের এক শিশুকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেই খবর বেরিয়েছিল৷
আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদের নেত্রীর জন্য বেশি সক্রিয় থাকবেন, সেটা কাম্য৷ কিন্তু কর্মরত পুলিশপ্রধান যখন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার প্রশংসা করে কলাম লেখেন, তখন তা একটু ভাবনার জন্ম দেয়৷ ঐ প্রবন্ধে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী কতটা সফল তা তুলে ধরেন৷ সরকারপ্রধানকে নিয়ে পুলিশপ্রধানের এমন লেখা পুলিশের সব সদস্যকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে নিশ্চয়৷
ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে গত অক্টোবরে গাইবান্ধার একটি আসনে ভোট বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন৷ তাদের এই সাহসী ভূমিকায় অনেকেই হয়ত আশ্বস্ত হয়েছিলেন৷ কিন্তু একজন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) হৈচৈ-এর খবরঅন্য বার্তাও দিয়েছে৷
গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংস্থা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ বলছে, গত নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমান্বয়ে কমেছে৷ ২০১৮ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬৷ পরবর্তী বছরগুলোতে সেটা ক্রমেই বেড়েছে৷ ২০১৯ সালে ১৫০, ২০২০ সালে ১৫১, ২০২১ সালে ১৫২ আর এবছর সেটা আরও বেশি বেড়ে হয়েছে ১৬২৷
এই পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল চালুর পর সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে আওয়ামী লীগের মনে হতে পারে, তাদের দেশ পরিচালনার নীতি ঠিকই আছে৷ তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই৷
এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা জানেন, বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে নেয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ ভবিষ্যতে পরিশোধ করতে রাষ্ট্র যে সমস্যায় পড়বে, সেই খবর এখন সাধারণ নাগরিকেরাও জানেন এবং আসন্ন নির্বাচনে তার একটা প্রভাব পড়তে পারে৷ সেই আশঙ্কা থেকেই হয়ত আওয়ামী লীগ এবারও সবশেষ দুই নির্বাচনের মতোই কোনোরকমে একটা নির্বাচন আয়োজন করতে চাইবে৷
এই অবস্থায় নতুন বছরে আমার চাওয়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে আমার ভোট আমিই দিতে পারবো৷